ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্ম বিরতি পালন
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৪, ১৬:২৫
ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধদিবস কর্ম বিরতি পালন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

১৩ মার্চ ২০২৪ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপন (এস.আর.ও নং-৪৭-আইন/২০২৪) জারি করেছে যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী পদে ১ জুলাই, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করিবেন, তাদেরকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করা হয়।


শিক্ষক সমিতি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এইচরম বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিকট উক্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করার জন্য জোর দাবি জানায়।


৪ জুন, মঙ্গলবার শিক্ষক সমিতি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচির সাথে ঐকমত্য পোষণ করে পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে অর্ধদিবস কর্ম বিরতি পালন করে। বিদ্যমান পেনশন এবং প্রত্যয় স্কিমের সুবিধা ও বৈষম্যের তুলনামূলক চিত্র নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:


১. এই ব্যবস্থা ১ জুলাই ২০২৪ আগে যোগদানকৃত এবং ১ জুলাই ২০২৪ এবং তার পরে যোগদানকৃতদের মধ্যে দুটি ভিন্ন শ্রেণির জন্ম দেবে। একই কর্মক্ষেত্রে অবস্থানরত সহকর্মীদের মধ্যে এই বিভাজন শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে । এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিটি ধাপেই নতুন নিয়োগ হয়। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলে সেটিও নতুন নিয়োগের ভিত্তিতে হয়।


২. এই ব্যবস্থা সরকারি অন্যান্য চাকরিজীবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য তৈরি করবে, যা সংবিধানের সমতার নীতি পরিপন্থি।


৩. বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন বাবদ কোনো অর্থ কর্তন করা হয় না। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে অথবা ৫০০০ টাকা (যেটি সর্বনিম্ন) কর্তন করার বিধান রয়েছে।


৪. বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্য হন। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে আনুতোষিক প্রাপ্য হবেন না।


৫, বিদ্যমান পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হন। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে পেনশনারের মৃত্যু হলে নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫বছর পূর্তি হওয়া পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্ত হবেন।


৬. বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনের ওপর বৎসরিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয়। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়।


৭. বিদ্যমান ব্যবস্থায় অর্জিত ছুটি নগদায়নের সুযোগ রয়েছে। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে সেই সুযোগ নেই।


৮ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ বছর। ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অবসরকালীন বয়স স্থির করা হয়েছে ৬০ বছরে যাহা অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।


৯. বিদ্যমান ব্যবস্থায় পেনশনের সাথে মাসিক চিকিৎসা ভাতা, বছরে ২ টি উৎসব ভাতা, এবং বৈশাখি ভাতা প্রদান করা হয় কিন্তু ‘প্রত্যয়’ স্কিমে এই ধরনের ভাতার উল্লেখ নেই।


১০. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বর্তমানে বিদ্যমান পেনশন স্কিমের আওতায় রয়েছেন এবং তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ নেই। কী কারণে তাদের নতুন স্কিমের আওতায় আনার প্রয়োজন হলো, তা স্পষ্ট নয়। আমরা মনে করি এই পদক্ষেপ শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অসম্মান ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে। রাষ্ট্রের স্বার্থে কোনো ব্যবস্থার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে তা সকলের জন্য প্রযোজ্য হওয়া বাঞ্ছনীয় হওয়া প্রয়োজন।


১১. এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে আগামী দিনে মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের আগ্রহ হারাবে, ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম পিছিয়ে পড়বে এবং দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির ক্ষেত্র সংকুচিত হবে। রাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়বে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার পরিকল্পনা ব্যাহত হবে।


বিবার্তা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com