২২ দিন যাবৎ বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কি ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ২৩:০৬
২২ দিন যাবৎ বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কি ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা
কুবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

অনির্দিষ্টকালের জন্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধের ২২তম দিন আজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-শিক্ষক সমিতির বিতর্কিত এবং অপেশাদার কর্মকাণ্ডের ফলে এই অচলবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত, দাবি আদায়ে শিক্ষক সমিতির লাগাতার ক্লাস বর্জন, প্রশাসনের অনিয়ম দাবি করে প্রশাসনিক পদ থেকে ১৯ শিক্ষকের পদত্যাগ, উপাচার্যের সাথে শিক্ষক সমিতির প্রকাশ্যে বাকবিতণ্ডা, উপাচার্য-শিক্ষক সমিতি-ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘাতে গত ৩০ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।


এমনই টালমাটাল অবস্থা চলছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলবস্থা নিয়ে কি ভাবছেন উচ্চশিক্ষার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষক সমিতি।


এই বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিরসনের জন্য সিন্ডিকেট থেকে দুটি কমিটি করা হয়েছে। আশা করছি কমিটিগুলো আলোচনা করে খুব শীঘ্রই রিপোর্ট দিবেন।


তিনি আরো বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে শিক্ষক সমিতির যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে সেগুলো দেশজুড়ে ভাইরাল হয়েছে। দুই পক্ষেরই ভিডিও আছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে। শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা অপেক্ষাকৃত তরুণ। তাদের কয়েকজনের সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছে। এখানে উপাচার্যও একজন শিক্ষক। তাদের উভয়পক্ষ থেকে শিষ্টাচার বহির্ভূত যে শব্দচয়ন করেছে সেগুলো ঠিক না। সবার আগে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই শিক্ষক সমিতি ও উপাচার্যকে নমনীয় হতে হবে। এছাড়া উপাচার্যের যেসব সীমাবদ্ধতা ছিল সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে।


কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জামাল নাসের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। সেখানে চেইন অফ কমান্ড ঠিক থাকতে হবে। চেইন অফ কমান্ড ঠিক না থাকলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের জন্য দুই পক্ষকেই নমনীয় হতে হবে। আলোচনা করতে হবে। আলোচনা ছাড়া এই সমস্যা সমাধানের কোন পথ নেই।


এই বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, আমরা ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য স্যারের সাথে দেখা করতে গেলে যে হামলার শিকার হই সেটির কোনো বিচার এখনো পাইনি৷ বিচার তো দূরে থাক, উপাচার্য সেটির জন্য একটি তদন্ত কমিটি পর্যন্ত করেনি। তারপর আমরা নানাভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়েছি৷ ক্লাস বর্জন, অবস্থান কর্মসূচি করেছি। কিন্তু এর মাঝে উপাচার্য ২৮ এপ্রিল বহিরাগতদের নিয়ে উনিসহ শিক্ষকদের উপরে যে হামলা চালালেন- সেটির পরে আমরা তার সাথে আর কাজ করতে পারব না। তাই আমরা উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছি। তাদের পদত্যাগ না হওয়া অব্দি আমরা ক্লাসে ফিরব না। দ্রুত আমাদের দাবি মানা হোক।


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট থেকে দুটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটির সুপারিশ মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছে সেটা পুষিয়ে দেয়ার জন্য রিকভারি প্লান তৈরি করা হবে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের মান উন্নয়নে সহায়ক এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশৃঙ্খলা কোনভাবেই কাম্য নয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবন হুমকির মুখে পড়ে। শিক্ষক সমিতি যেসব দাবি-দাওয়া পেশ করেছিল, সেসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় উপাচার্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে দুটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে শিক্ষক সমিতির দাবি-দাওয়া, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা চলবে। আশা করি সমাধান আসবে।


তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কখনো প্রশাসনের প্রতিপক্ষ হতে পারে না। তারাও প্রশাসনের অংশ। আমাদের সকলকে মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে হবে।


উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, আমি এক মুহূর্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখতে চাই না। শিক্ষক সমিতিই প্রথমে ক্লাস বর্জন করেছে। পরবর্তীতে সিন্ডিকেট উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। শিক্ষক সমিতির দাবি-দাওয়া, উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করে দেয়া হয়েছে। তারা বসুক, আলোচনা করুক। কমিটি আমাদের যা সুপারিশ করবে আমরা তা মেনে নিব।


বিবার্তা/প্রসেনজিত/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com