ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে ঢাবিতে পাকিস্তানি ধর্মভিত্তিক সংগঠন ‘দাওয়াতে ইসলামীকে’ নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
লিখিত প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে যে, "২০১৫ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একাত্তরে গণহত্যার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা না করা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানের সাথে আজ থেকে বিদ্যায়তনিক, গবেষণামূলক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়াকেন্দ্রিক সকল প্রকার যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিন্ন করছে। এখন হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক কিংবা ছাত্র-ছাত্রীদের কোন প্রতিনিধি দল পাকিস্তান সফরে যাবে না ও পাকিস্তানের সাথে কোন শিক্ষা বিনিময় কার্যক্রম পরিচালিত হবে না।
২০১৫ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক একাত্তরের গণহত্যার দায় সম্পূর্ণ অস্বীকার করার প্রেক্ষিতে একই বছরের ১৪ ডিসেম্বর প্রতিবাদ জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। এরপর থেকে দেশের সর্বোচ্চ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ছিন্ন রয়েছে। অথচ প্রায় ৮ বছর পরে এসে অমান্য করা হলো সেই সিদ্ধান্ত।
গত ৩ জানুয়ারি, মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ঢাবি’র লেকচার থিয়েটার ভবনের আর. সি. মজুমদার মিলনায়তনে ওই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা হয়েছে, ‘দাওয়াতে ইসলামীর শিক্ষা বিভাগ, ঢাবি'। সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘দাওয়াতে ইসলামী’র কর্ণধার পাকিস্তানি মাওলানা হাজী ইমরান আত্তারী। আর দাওয়াতে ইসলামী শিক্ষা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান এবং আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল-মারূফ সেমিনারে বক্তব্য রাখাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন। এমনকি সেমিনারের জন্য মিলনায়তনও তার তত্ত্বাবধানে ভাড়া নেয়া হয়েছে।
‘দাওয়াতে ইসলামী’ একদিকে পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক সংগঠন অন্যদিকে পাকিস্তানের বক্তাও এসেছে অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাবির সেমিনারে। ফলে পুরো কার্যক্রমটি ২০১৫ সালের ঢাবির সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। সিদ্ধান্ত মোতাবেক যতদিন না পাকিস্তান সরকার ক্ষমা চাইবে, ততদিন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের দেশের সাথে কোনো একাডেমিক, কোলাবোরেশন, কালচারসহ ইত্যাদি কাজ করবে না।
বিজ্ঞপ্তি আরো বলা হয়, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫শে মার্চ কালরাতে বাঙালি জাতির ওপর যে নৃশংস গণহত্যা চালায় তার অন্যতম প্রধান টার্গেট ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা। সেদিন তারা আমাদের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের নির্মমভাবে হত্যা করে। পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে, ২ লক্ষের বেশি মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করে। সেই পাকিস্তানের মৌলবাদী সংগঠনকে এনে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্র প্রাঙ্গণে সেমিনার করেছে, তা অবশ্যই ধৃষ্টতাপূর্ণ ও শাস্তিযোগ্য। এই ধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজের সঙ্গে যারাই জড়িত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।"
বিবার্তা/সাইদুর/রাসেল/বিএম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]