শিরোনাম
একটি সরকারি চাকরি চান প্রতিবন্ধী এই মেধাবী
আবারো অনশনে সেই অদম্য চাঁদের কণা
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৩৬
আবারো অনশনে সেই অদম্য চাঁদের কণা
একটি সরকারি চাকরির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে চাঁদের কণা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চাঁদের কণা। পুরো নাম মাহবুবা হক চাঁদের কণা। অদ্যম মেধাবী। জীবন রাঙানো স্বপ্ন। জীবনের বাঁকে স্বপ্ন ডিঙাতে পাড়ি দিচ্ছেন বন্ধুর পথ। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা তাকে এতটুকু দমাতে পারেনি। এগিয়ে চলছেন ছন্দে ছন্দে। তীব্র বিশ্বাসে। পড়ালেখায় সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রেখে এখন ছুটছেন সরকারি চাকরির পেছনে।


সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার বিয়াড়া গ্রামে জন্ম চাঁদের কণার। বাবা আব্দুল কাদের। বয়স মাত্র নয় মাস। তখনই জীবনের মসৃন পথে নেমে আসে গাঢ়-কালো অন্ধকার। পোলিও আক্রান্ত হয়ে দুটি পা অচল হয়ে পড়ে চাঁদের কণার। কিন্তু নিজেকে থামাননি। ছুটেছেন সমান গতিতে। বাবা-মায়ের সহযোগিতায় দুই হাতে ভর করেই প্রয়োজনীয় সব কাজ চালিয়ে নেন।


রাজশাহীর মাদারবক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) পাস করেন চাঁদের কণা। পরে ২০১৩ সালে ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।


এদিকে স্নাতকোত্তর অর্জনের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি মেলাতে পারেননি চাঁদের কণা। একটি সরকারি চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করেন এই তরুণী। গত ২৬ জুন। অনশন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। পান চাকরির আশ্বাস। অনশন ভেঙে স্বপ্ন নিয়ে ফিরে যান বাড়ি। তবে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির আশ্বাস পেলেও পরে সেটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।


চাঁদের কণা বিবার্তাকে জানান, ‘আমাকে সমাজসেবা অধিদফতরে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরির প্রস্তাব দেয়া হয়। যে চাকরি এসএসসি পাস করেও সম্ভব।’


তিনি বলেন, ‘আমি বেশি কিছু চাই না। চাই যোগত্য অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরি। আমি বারবার গণভবনে গিয়ে চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখার করার সুযোগ পাইনি। আমি আমার মা দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাই। আমার মা নেই। প্রধানমন্ত্রীই আমার মা। তিনি আমার দুঃখ-কষ্ট বুঝবেন।


আমি আশা করি, তার সাথে দেখা হলে আমার কথাগুলো বলতে পারলে তিনি একটা সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন। মেয়ের কষ্টের কথা শুনে মা কখনো মুখ বুঝে বসে থাকবেন না। মা বাঁচার পথ তৈরি করে দেবেন। আমি আমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই।’


আবারো প্রেসক্লাবে চাঁদের কণা। বসেছেন আমরণ অনশনে। চান যোগ্যতা অনুযায়ী একটি সরকারি চাকরি।


জানা যায়, চাঁদের কণা যখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী, তখন মা মারা যান। কয়েক বছর পর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। ছোট দুটি ভাই। চরম দারিদ্র্য সত্ত্বেও তিনি থেমে থাকেননি। টেলিভিশনের জন্য অনুষ্ঠান গ্রন্থনা এবং কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজকর্ম করে জীবিকা চালিয়েছেন।


শিক্ষাজীবনের সংগ্রামমুখর দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আমি যখন মাদার বক্স কলেজে পড়তাম। তখন পঞ্চম তলায় আমার ক্লাস হতো। ৯টার ক্লাসের জন্য আমি কলেজে যেতাম সকাল ৭টার দিকে। হাতে ভর দিয়ে পঞ্চম তলায় উঠতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় লাগত। স্কুলজীবন থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত এমন লক্ষ্য-কোটি বাধা পেরিয়ে প্রতিবন্ধিতা জয় করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়া।’


অনশনে বসার বিষয়ে তিনি বিবার্তাকে আরোবলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করার পর যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেছি। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পার হতে মাত্র চার মাস বাকি। বাধ্য হয়ে আবারো আমরণ অনশনে বসেছি।’


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com