শিরোনাম
ডিএসসিসির ছয় কোটি টাকাই জলে!
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:২২
ডিএসসিসির ছয় কোটি টাকাই জলে!
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি হোল্ডিং মালিকের জন্য ৪৭৫ মিলিলিটারের একটি করে অ্যারোসলের ক্যান বরাদ্দ। যদিও এ সিটির মোট হোল্ডিংয়ের ৮০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। তাদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। আবার যেসব হোল্ডিং মালিক ট্যাক্স পরিশোধ করেননি, তাদের দেয়া হচ্ছে না অ্যারোসল।


শুধু ভিআইপিদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। অন্যদের ওয়ার্ডের নির্ধারিত স্থানে ট্যাক্স পরিশোধের রসিদ দেখিয়ে নিতে হচ্ছে অ্যারোসল। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অ্যারোসল আনতে অনেকেই সাড়া দিচ্ছেন না।


এলাকাবাসীর বলছেন, মশা কামড় দেয়ার সময় তো আর বুঝবে না কে নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করেছেন; অথবা করছেন না।


সবমিলিয়ে অধিকাংশ বাসা-বাড়িতেই পৌঁছাচ্ছে না কর্পোরেশনের এ অ্যারোসল। ফলে ডিএসসিসির প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা এ ‘অ্যারোসল কর্মসূচি’ কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখছে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।


তাদের মতে, যখন এডিসের প্রকোপ তুঙ্গে ছিল, তখন এ স্প্রে করলে বাসার ভেতরের এডিস নিধনে হয়তো কিছুটা কার্যকর হতো। যদিও নগরীর মোট বাসাবাড়ির তুলনায় হোল্ডিং মালিকদের একটি করে দেয়া এ ক্যান খুবই অপ্রতুল।


কীটতত্ত্ববিদ, নগর বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া হুটহাট এভাবে অ্যারোসল কেনায় জনগণের ট্যাক্সের বিপুল অর্থ একরকম জলে পড়ছে। তাদের মতে, এ কর্মসূচিতে কারও আর্থিক লাভ হলেও হতে পারে। তবে মশক নিধনে কোনো লাভ হবে না।


কারণ এ অল্প পরিমাণ অ্যারোসল একেকজন বাড়ির মালিককে দিয়ে নিজ বাসার মশা কয়েকদিনের জন্য মারা ছাড়া বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ উদ্যোগ বাহুল্য এবং স্রেফ লোক দেখানো।


কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, এডিস মশার প্রকোপের সময় ডিএসসিসির অ্যারোসল বিতরণের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক ছিল। এটা নগরবাসী বাসাবাড়িতে নিয়মিত ব্যবহার করলে উড়ন্ত মশক নিধনে বড় ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু সঠিক সময়ে এবং সর্বস্তরে ওষুধ সরবরাহ করতে না পারায় ‘অ্যারোসল’ মশক নিধনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।


তিনি বলেন, ভবন মালিক ও ভাড়াটিয়া সবার বাসায় মশা ঢুকবে, সবাইকে মশা কামড়াবে। এক্ষেত্রে কাউকে অ্যারোসল দেয়া হবে আর কাউকে দেয়া হবে না- এভাবে মশক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ফল বয়ে আনবে না।


নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঘরের ভেতরের মশা মারার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের নয়। ঘরের বাইরের আবর্জনা পরিষ্কার, নর্দমা ও খালগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করলে ঘরে মশা আসবে কোথা থেকে।


তিনি বলেন, অ্যারোসল বিতরণ কর্মসূচি কারোর ব্যক্তিগত মত বা সিদ্ধান্ত হতে পারে। এছাড়া কাউকে আর্থিকভাবে সুবিধা দেয়ার জন্যও করা হয়ে থাকতে পারে।


তিনি আরো বলেন, যে উদ্দেশ্যে এটা করা হোক না কেন, এটি ব্যাপকভাবে মশক নিধনে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখছে না এবং রাখবেও না। এর পুরো অর্থই অপচয় হয়েছে।


তবে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধিরা ডিএসসিসিতে এলে মশক নিধনে অ্যারোসল ব্যবহারে উপকার হতে পারে বলে পরামর্শ দেন।


ওই পরামর্শের ভিত্তিতে ‘অ্যারোসল’ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অ্যারোসল বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিতরণ কার্যক্রম শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছি।


জানা যায়, সোমবার পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার অ্যারোসল বিতরণ করা হয়েছে। বাকিগুলোর বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রুটিন কার্যক্রম বাদ দিয়ে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যস্ত সময় ব্যয় করছেন অ্যারোসল বিতরণে।


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com