শিরোনাম
সপ্তাহে তিনদিন অফিস করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০১৯, ১৮:৫১
সপ্তাহে তিনদিন অফিস করেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা!
তানোর (রাজশাহী) সংবাদদাতা
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহীর তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. রোজিয়ারা খাতুনের সপ্তাহ হয় তিন দিনে। সোম থেকে বুধ- এই তিন দিন অফিস করেন তিনি। অনুপস্থিত থাকেন বাকি দিনগুলো। অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে উপজেলা প্রশাসনের কর্মসূচিতেও অনুপস্থিত থাকেন তিনি।


সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতেও অংশ নেননি রোজিয়ারা খাতুন। এর আগে গত ৩১ জুলাই দিবসটি পালনের প্রস্তুতি সভাতেও তিনি অংশ নেননি। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ডা. রোজিয়ারা খাতুন ভবিষ্যতে জাতীয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশ না নিলে বিষয়গুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করা হবে।


প্রস্তুতি সভার সিদ্ধান্তে লেখা হয়েছিল, সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, তানোর অনুপস্থিত থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। জাতীয় শোক দিবসের প্রস্তুস্তিমূলক সভায় একজন অফিস প্রধানের অনুপস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য নয়।


উপজেলায় বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন সভায় তাকে অনুপস্থিত পাওয়া যায় যা সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধির পরিপন্থী। তিনি জাতীয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বিষয়টি অবহিত করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন বানু এতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তারপরেও তিনি শোক দিবসের অনুষ্ঠানে যাননি।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি ডেঙ্গু ও বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলার সব উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হন জেলা প্রশাসক হামিদুল হক। সেদিন কথা বলতে জেলা প্রশাসক ডা. রোজিয়ারা খাতুনকে খুঁজছিলেন। কিন্তু ওই দিনও ছিলেন না রোজিয়ারা। অথচ এ ব্যাপারে সচেতনতার জন্য তাকেই সবার আগে দরকার। অনুপস্থিত থাকায় জেলা প্রশাসকও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।


তানোর সরকারি আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রাকিবুল সরকার পাপুল বলেন, একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হলেও ডা. রোজিয়ারা খাতুন জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নেন না, এটা ভাবতে অবাক লাগে।


তিনি বলেন, এই কর্মকর্তা অফিসও ঠিকমতো করেন না। হাসপাতালের চারপাশে এখন আগাছা আর ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। সারাদেশে যখন ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে তখন ডা. রোজিয়ারার কোনো কার্যক্রমই নেই।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক সূত্র জানায়, শুধু কর্মসূচি পালনেই নয়, অফিসেও অনুপস্থিত থাকেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তিনি সপ্তাহের সোমবার রাজশাহী জেলা সদর থেকে তানোর যান। বুধবার অফিস শেষ করেই তিনি রাজশাহী ফেরেন। ডা. রোজিয়ারা খাতুন শুধু সোম, মঙ্গল ও বুধবার অফিস করেন।


এদিকে ডা. রোজিয়ারা খাতুনের এভাবে অনুপস্থিত থাকায় তানোরে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার এখন পরিত্যক্ত। অকেজো এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম ও জেনারেটর। হাসপাতালটিতে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা। অথচ কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকার কঠোর নির্দেশনা তোয়াক্কা করছেন না টিএইচও।


অভিযোগ উঠেছে, অফিসে অনুপস্থিত থাকলেও নানা অনিয়মে যুক্ত ডা. রোজিয়ারা খাতুন। হাসপাতালের জেনারেটর অকেজো থাকলেও করা হয় তেলের বিল। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের ভৌতিক বিলের মাধ্যমেও সরকারি টাকা লুট করা হয়। সূত্র বলছে, প্রশিক্ষণসহ নানা অজুহাতে তিনি অফিস ফাঁকি দেন। আর যেদিন অফিসে যান সেদিন করেন নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি।


জানতে চাইলে অনিয়ম-দুর্নীতি আর অফিস ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তানোরের টিএইচও ডা. রোজিয়ারা খাতুন। শোক দিবসের প্রস্তুতি সভায় অনুপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ট্রেনিংয়ে থাকায় সভায় উপস্থিত থাকতে পারিনি। তবে অন্য সব জাতীয় দিবসে উপস্থিত ছিলাম। জাতীয় শোক দিবসে কেন উপস্থিত ছিলেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আমার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিবসটি পালন করেছি। উপজেলা পরিষদে করতে হবে কে বলেছে?


তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলছেন, জাতীয় দিবসে উপজেলা প্রশাসন যে কর্মসূচির আয়োজন করবে সেখানে প্রত্যেকটি অফিসের প্রধানের উপস্থিত থাকাটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমি বিষয়টি শুনেছি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রোজিয়ারা খাতুন বিভিন্ন দিবসের কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকেন না। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনেরই সভায় উঠে এসেছে। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনই ব্যবস্থা নেবে।


তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু বলেন, ডা. রোজিয়ারা খাতুন বিভিন্ন জাতীয় দিবস ছাড়াও অন্যান্য সভায় অনুপস্থিত থাকেন। অথচ তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। তাই আমরা তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জানানোর সিন্ধান্ত নিয়েছি। জেলা প্রশাসনের আগামী মাসিক সমন্বয় কমিটির সভাতেও বিষয়টি উত্থাপন করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।


বিবার্তা/অসীম কুমার সরকার/জাই


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com