শিরোনাম
পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত মৌলভীবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৩৮
পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত মৌলভীবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছিল প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জিসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলো।


জীববৈচিত্র্যে ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্নাধারা হামহাম জলপ্রভাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাগীছড়া লেক, আলীনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামণ্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মণিপুরী, প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মণিপুরী, টিপরা ও গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদ পর্যটকদের মন ও দৃষ্টি কেড়ে নেয়। ঈদের ছুটিতে এসব আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলো মুখরিত হয়ে হয় মানুষের ভিড়ে।


বুধবার সকালে মাধবপুর লেক আর লাউয়াছড়া উদ্যানে দেখা মিলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটনপ্রেমী ভ্রমণ পিপাসুদের। এদের মধ্যে স্বপরিবারে ঘুরতে আসা পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। ঈদের দিনের চেয়ে মঙ্গলবার ও বুধবার লোকজনের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। বৃষ্টি উপেক্ষা করেও পর্যটকরা ছুটে এসেছেন জীববৈচিত্র্যের অপরূপ সমাহার দেখতে।


ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়ায় জাতীয় উদ্যানে ঘুরতে আসা বি-বাড়িয়ার চাকরিজীবী আবু হাসান, নরসিংদীর এনজিও কর্মী মাসুদ রহমান, হবিগঞ্জের ব্যাংকার আলমগীর আহমদ, সুনামগঞ্জের গৃহিণী সুমাইয়া রহমান, সিলেটের কলেজ ছাত্রী শারমিন বেগম ও ফাহমিদা আক্তার জানান, লাউয়াছড়ার বন একটি সমৃদ্ধ বন। প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য আর জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই বনটি যে কেউ দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে। লাউয়াছড়ায় ঘুরতে আসা শিশু জেরিন ইসলামের সঙ্গে কথা বললে সে মায়াবী কণ্ঠে জানায়, এখানে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। আব্বু আম্মুর সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। বানরের লাফালাফি দেখেছি। বড় একটা ব্যাঙের ছাতা দেখেছি (ব্যাঙের ছাতার আদলে তৈরি মানবছাতা)। এখানে এত গাছ, একসঙ্গে এত গাছ আগে দেখিনি।



পাহাড়ি টিলার ওপর সবুজ চা বাগানের সমারোহ, জাতীয় ফুল দুর্লভ বেগুনী শাপলার আধিপত্য, ঝলমল স্বচ্ছ পানি, ছায়া নিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আনন্দের বাড়তি মাত্রা যুক্ত করেছে। লেকের চারপাশে বিশাল টিলায় সারিবদ্ধ ছোট-বড় গাছ আর সবুজ চা গালিচার টিলার মাঝখানে জলরাশি। টলটলে রূপালী জলের সঙ্গে দিবা-নিশির মিতালি করছে নীল পদ্মফুল। জলের আলো ছায়ার নীল পদ্মের লুকোচুরি খেলা মনোমুগ্ধ করে আগত পর্যটকদের। প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজে নিজের রূপ দিয়েই আকর্ষণীয় হয়ে উঠায় জলের পদ্ম কন্যার মায়ায় আকড়ে ধরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। তার এই মনোরম সৌন্দর্য দর্শনে ঈদের ছুটিতে প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে এসেছেন মাধবপুর লেকে। নয়নভিরাম এ জলারণ্য দল বেঁধে দেখতে গত বছরের তুলনায় এ বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বেশি ছিল বলে জানান, লেকের প্রধান ফটকে দায়িত্বে থাকা বাবুল সরকার।


মাধবপুর লেকে বেড়াতে আসা কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী শ্রাবণী আক্তার, সিলেটের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, ব্যবসায়ী মছব্বির আলী জানান, মাধবপুর লেক দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। এত সুন্দর যে এখানে বার বার আসতে মন চায়। পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলা ও সবুজ চা বাগান মধ্যে অবস্থিত লেকটি আমাদের আলাদা এক মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছে। সবার ছুটোছুটিতে পর্যটন স্পটগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।


এছাড়া ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, শমসেরনগর বাগীছড়া লেক, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধসহ কমলগঞ্জের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। তবে ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রভাতে পর্যটকদের ভিড় কিছুটা কম ছিলো। ভিড় কম থাকার কারণ হিসেবে জানা যায়, হামহাম জলপ্রপাতে ভ্রমণ করতে পুরো একদিনের প্রয়োজন। আর অনেকটা পথ হেঁটে যেতে হয়। কিন্তু ঈদে বিভিন্ন ইভেন্টে ভ্রমণপ্রেমী পর্যটকরা আসছেন হামহাম জলপ্রভাত দেখতে। তাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি।


বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন জানান, এ ঈদের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম অধিক ঘটেছে। তবে ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে। এখানে গাইডরাও রয়েছে, এদের বলে দেওয়া হয়েছে যাতে পর্যটকরা এর বাইরে ও কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাতে বন ও পরিবেশের ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে।


পর্যটকদের জন্য নিয়ন্ত্রিত ট্যুরিজমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কমলগঞ্জ থানা পুলিশ, পর্যটন পুলিশ ও সিএমসি সদস্যদের নিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও প্রকৃতি ভ্রমণ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।


বিবার্তা/আরিফ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com