শিরোনাম
৩ ঘণ্টার অপেক্ষা শেষ করে দিল সব
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০১৯, ১০:৫২
৩ ঘণ্টার অপেক্ষা শেষ করে দিল সব
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ির ১নং ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে মারা যায় স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষ। তার বাড়িতে এখন শোকের মাতম। গত তিন দিনেও থামেনি স্বজনদের আহাজারি।


নিহত তিতাস ঘোষ (১২) নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পৌর এলাকার বড়কালিয়া গ্রামের মৃত তাপস ঘোষের ছেলে। কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল তিতাস।


সোমবার (২৯ জুলাই) কাঁদতে কাঁদতে তিতাসের বোন তন্নীসা ঘোষ বলেন, বুধবার (২৪ জুলাই) তিতাস একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেয়ার কথা বলেন চিকিৎসকরা। পরদিন বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) তিতাসকে ঢাকায় নেয়ার জন্য রওনা দেই আমরা। রাত ৮টায় কাঁঠালবাড়ি ১নং ফেরিঘাটে তিতাসকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে। ওই অ্যাম্বুলেন্সে আমি, আমার মা এবং আমার মামা ছিলেন। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ওই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়।


তন্নীসা ঘোষ বলেন, ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছার দীর্ঘক্ষণ পরও ফেরিতে তোলা হয়নি। এর কারণ জানতে গেলে জানানো হয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন ভিআইপি তার আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবেন। তাই ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তখন আমার ভাইয়ের আশঙ্কাজনক অবস্থার কথা জানিয়ে সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যাই। ‘ভিআইপি আগে যাবে, তারপর অন্যরা যাবে’ এ কথা বলে তারা আমাদের ফিরিয়ে দেন।


তন্নীসা ঘোষ বলেন, এরপর বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের কাছে ছুটে যাই আমরা। তারাও আমাদের একই কথা বলে ফিরিয়ে দেন। উপায় না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে আমার মা এবং মামা বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের পা ধরেন। অনেক অনুরোধ করেছি তাদের। এরপরও তারা ফেরি ছাড়তে রাজি হননি।


ওই সময় আশপাশের অনেক লোকজন অনুরোধ করলেও কারও অনুরোধ রাখেননি ওই কর্মকর্তারা। কোনো উপায় না পেয়ে সরকারি জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেও তারা আমাদের সহযোগিতা করেনি। এ অবস্থায় ওই ভিআইপি আসার অপেক্ষায় তিন ঘণ্টা ঘাটে বসে থাকতে হয়েছে আমাদের। শেষ পর্যন্ত রাত ১১টার দিকে ওই ভিআইপির আত্মীয়রা এলে ফেরি ছাড়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় আমার ভাই।


তিতাসের মামা বিজয় ঘোষ বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য তিতাসকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। ফেরিঘাটে যাওয়ার পর সব শেষ করে দিলেন এক ভিআইপি। ফেরির লোকদের পায়ে ধরে মাটিতে পড়ে কেঁদেছে আমার বোন। তবুও ফেরি ছাড়েনি তারা। তারা আমাদের বলেছে ফেরি ছাড়লে নাকি তাদের চাকরি থাকবে না।


এদিকে, তিতাসের মৃত্যুর প্রতিবাদে ও বিনাচিকিৎসায় একজন ছাত্রের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারের দাবিতে সোমবার তিতাসের বিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা কালিয়ায় মানববন্ধন করেছেন।


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com