শিরোনাম
মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়েছে ভারতীয় জেলেরা
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০১৯, ১৭:১৯
মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়েছে ভারতীয় জেলেরা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর দীর্ঘ ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়েছে ভারতীয় জেলেরা। তারা এ সময় বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলেরা।


সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। জেলেরা বুধবার থেকে সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারবেন। কিন্তু এর আগেই জেলেরা এই নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।


তাদের অভিযোগ, দুই মাসেরও বেশী সময় তারা সাগরে মাছ ধরতে পারেননি, কিন্তু সুযোগটি নিয়েছে ভারতীয় জেলেরা - তারা এ সময় বাংলাদেশের সীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে গেছে।


দক্ষিণাঞ্চলীয় বরগুনা জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে নলিবাজার। বাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকাটি জেলে অধ্যুষিত। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই সাগরের মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভর। মাছ ধরার জন্য নৌকা নিয়ে সাগরে যেতে পারলে তাদের জীবিকা চলে, নতুবা জীবন থমকে যায়। টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার সময় জেলেরা অলস সময় কাটিয়েছেন।


এক জেলের স্ত্রী রেনু বেগম বলেন, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সময়টাতে তার সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল। খাওয়া-দাওয়া চলাফেরায় সমস্যা হয়। এহন তো জাল বাইতে পারে না।


সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দেয়ার ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, শুধু নিবন্ধিত জেলেরাই এই সহায়তা পাবে।


আব্দুর রাজ্জাক নামে আর এক জেলে বলেন, ৬৫ দিনের জন্য ৪০ কেজি চাল নিতান্তই কম। বহু জেলে আছেন যারা সরকারের খাতায় নিজেদের নাম নিবন্ধন করাতে পারেননি।


তিনি বলেন, আমি যখন মাছ ধরতে সাগরে গেছি, তখন কার্ড কইরা ওরা চইল্যা গেছে। এই রকম আমার মতো হাজার-হাজার জেলে আছে কার্ড করতে পারে নাই।


জেলা মৎস্য অফিসের হিসেব অনুযায়ী, বরগুনায় ৪৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে আছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে।


মৎস্য আহরণের সাথে জড়িতরা বলছেন, ভারতে যখন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ থাকা উচিত।


বরগুনা জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতের সাথে মিল রেখে এই 'অবরোধ' কার্যকর করা হোক।


তিনি বলেন, ভারতে বাংলা পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০শে জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত মাছ ধরার উপরে অবরোধ। আমাদের এখানে মাছ ধরার উপর অবরোধ ৬ই জ্যৈষ্ঠ থেকে ১০ই শ্রাবণ। বঙ্গোপসাগর একটাই। সাগরে তো কোন ওয়াল দেয়া নাই যে ইলিশ মাছ ওপাশে যাবে না।


তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, একই বঙ্গোপসাগরে দুই রকমের নিয়ম হয় কিভাবে?


বরগুনা জেলার মৎস্য অফিস বলছে, বিচার-বিশ্লেষণ করেই এ সময়টিতে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।


জেলেদের অভিযোগ হচ্ছে, বাংলাদেশের সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রাখার সুযোগ নিয়ে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ অংশে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোবসাগরে ৩২টি ভারতীয় ট্রলারসহ ৫০০ জেলে আটক করা হয়েছিল। এ খবর প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে।


কিন্তু পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঝড়ের কবলে পড়ে তারা বাংলাদেশের জলসীমা এসেছিলেন। তবে ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশে এসে মাছ ধরার বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে বলে জানান বরগুনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ।


এক্ষেত্রে কোস্ট গার্ড এবং নৌবাহিনী সজাগ রয়েছে বলেও তিনি জানান।


মৎস কর্মকর্তারা বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার বিষয়টি ২০১৫ সাল থেকে শুরু হলেও চলতি বছর সবচেয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।


এই সময়টিতে মাছ ধরা বন্ধ রাখার কারণে মাছের উৎপাদন বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন বরগুনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা আজাদ। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/তাওহীদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com