বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

এর আগে মঙ্গলবার সারাদিন ধরে পুলিশ কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে গ্রেফতারের কথা জানায়পুলিশ।

২৬জুন প্রকাশ্য দিবালোকে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এই মামলার এক নম্বর সাক্ষী ছিলেন মিন্নি।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বুধবার সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করেও তিনি তার মেয়ের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য একজন আইনজীবী পাননি।

তিনি বলেন, যারা আসামি তাদের বাঁচানোর জন্য এখন এগুলা করতেছে। যার স্বামী মারা গেল, তাকে বাঁচানোর জন্য কী চেষ্টা আমার মেয়ে করছে, সবাই দেখছেন আপনারা।

তিনি আরো বলেন, সেই এক নম্বর সাক্ষী আজ কাঠগড়ায়। এমনকি বুধবার আমার মেয়ের পক্ষে কোনোউকিলও (আইনজীবী) দিতে পারিনি। কেউ যাতে তার জন্য কোর্টে না দাঁড়ায়, সেজন্য বারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুনেছি।

কারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এলাকার প্রভাবশালী লোকেরা ছাড়া কারা এ কথা বলতে পারে, আপনারা বুঝে নেন। আমি বলতে গেলে কী আমি দেশে থাকতে পারবো?

তবে মিন্নির বাবার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান নান্টু।

তিনি বলেন, জেলা আইনজীবী সমিতি এমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। উনি (মিন্নির বাবা) মিথ্যা কথা বলছে। এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি। মিন্নির বাবার সাথে আমার আদালতের বারান্দায় দেখা হয়েছে, উনি তো আমাকে কিছু বলেন নাই এ ব্যপারে।

বরগুনা অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সঞ্জীব কুমার দাস বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতদিনের রিমান্ড চাইলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জানিয়েছেন, মামলার একজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে মিন্নিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এছাড়াও হত্যাকাণ্ডের আগে মামলার আসামিদের কয়েকজনের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনের একটি কললিস্ট আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও জানান সঞ্জীব কুমার দাস।

রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর গত প্রায় তিন সপ্তাহে নিহতের বাবা দুলাল শরীফ এবং নিহতের স্ত্রী মিন্নি আলাদা আলাদা কয়েকটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

বরগুনার স্থানীয় সংবাদকর্মীরা বলেন, ১৩ই জুলাই রিফাতের বাবা বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ছেলের হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততা রয়েছে দাবি করে তার পুত্রবধূর গ্রেফতারের দাবি করেন। পরদিন মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবিতে বরগুনায় একটি মানববন্ধনও করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এ মামলার তদন্তে এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতারকরা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে স্বীকারোক্তি প্রদানের জন্য ১০জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখনো রিমান্ডে রয়েছে তিনজন।

এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ নয়ন, যিনি 'নয়ন বন্ড' নামে পরিচিত, জুলাই মাসের দুই তারিখে তিনি পুলিশের সঙ্গে কথিত 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হয়েছেন। সূত্র:বিবিসি

বিবার্তা/তাওহী