শিরোনাম
কুড়িগ্রামে ৪ শিশুর মৃত্যু, সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০১৯, ২২:৫৩
কুড়িগ্রামে ৪ শিশুর মৃত্যু, সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটছে। বন্যার পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।


ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমর ও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ৫৫টি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ৩৯০টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।


সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের হাবিবুল্লাহ (৬), ফুলবাড়ীতে ১ জন ও চিলমারী উপজেলায় ২ জন শিশু বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। তবে দুর্গম এলাকা হওয়ায় নিহত শিশুদের পরিচয় জানা যায়নি।


এদিকে সোমবার সকালে কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী মহাসড়কের ৪-৫ জায়গায় হাঁটু পানি প্রবাহিত হওয়ায় ভারী যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে যাতায়াত করছে।


নাগেশ্বরীতে নদী তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।



এদিকে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, কুড়িগ্রামে ৩টি পৌরসভাসহ ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় ৭৩ হাজার ৫১১টি পরিবারের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।


বন্যায় ২৭৫ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ২২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৬টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৯শ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ৫২২ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগেশ্বরীর বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়া এলাকায় দুধকুমর নদ তীররক্ষা বাঁধের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার মানুষ।


এছাড়াও হুমকিতে রয়েছে সদর উপজেলার বাংটুর ঘাট ও সারডোব তীররক্ষা বাঁধ। এখানে চর বড়লই বাংলাবাজার এলাকায় পাকা সড়ক ভাঙনের উপক্রম হয়েছে। নাগেশ্বরী-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের পাটেশ্বরী পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, উত্তর কুমরপুর মোড় ও চন্ডিপুর এলাকায় ধরলা নদীর পানি সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে রাস্তা রক্ষায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।


কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন পরিদর্শন করে এ ব্যবস্থার কথা সাংবাদিকদের জানান।



এদিকে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের ব্যাপারীগ্রামে বাড়ির পেছনে খেলতে গিয়ে হাবিবুল্লাহ (৬) নামে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। সে ওই গ্রামের কৃষক মাহবুবুরের ছেলে।


হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. রুমানুজ্জামান জানান, সোমবার বিকাল পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১০৮ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তার পানি কমে গিয়ে ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।


ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি সমন্বিতভাবে মোকাবেলার জন্য রোববার রাতে পানি সম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের উপস্থিতিতে এক বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সব বিভাগকে সক্রিয় থেকে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সচিব প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জানান।


সোমবার জেলার ৩টি বন্যাদুর্গত এলাকায় ২ হাজার পরিবারের প্রতিজনকে ১৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়।


বিবার্তা/সৌরভ/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com