শিরোনাম
লামায় পানিবন্দী ১৫ হাজার মানুষ
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০১৯, ২০:৫৫
লামায় পানিবন্দী ১৫ হাজার মানুষ
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ফের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে বান্দরবানের লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।


শুক্রবার রাত থেকে একটানা রবিবার সকাল পর্যন্ত টানা বর্ষণের ফলে মাতামুহুরী নদী, ঝিরি ও খালগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌর এলাকার ৫’শতাধিক বাড়িঘরসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়।এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে পাহাড়ি এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়ে ওইসব এলাকার শ্রমজীবি মানুষগুলো।


এদিকে রবিবার ভোর রাতে ভারী বর্ষণের সময় লামা সদর ইউনিয়নের মধুঝিরির আগায় পাহাড় ধসের মাটি চাপা পড়ে নুর জাহান (৬৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। এসময় নুর জাহানের ছেলে মোহাম্মদ ইরান ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম গুরুতর আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।


এছাড়া পাহাড় ধসে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বসতবাড়ি, ফসরি ফসল, জমি ও রাস্তা ঘাটের ব্যপক ক্ষতি হয়।দুর্যোগ কবলিতদের আশ্রয় নেয়ার জন্য আগে থেকেই ৫৫টি আশ্রয়ন কেন্দ্র খোলা ছিল। এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেড় শতাধিক বন্যাকবলিত ও পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড় ধসে আরো মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।


স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৫ জুলাই দিবাগত রাত থেকে একটানা ভারী বর্ষণ শুরু হলে লামা পৌরসভা ও উপজেলার লামা সদর, রুপসীপাড়া, গজালিয়া, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নিচু এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়।


গত বৃহস্পতিবার বিকালে এ বর্ষণ কমে গেলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু গত শুক্রবার (১২ জুলাই) দিবাগত রাত থেকে আবারো ভারী বর্ষণ শুরু হলে রবিবার (১৪ জুলাই) ভোর ৫টা নাগাদ পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া, বাসসষ্ট্যান্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজার, কলিঙ্গাবিল পাড়া, ছাগল খাইয়া, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকাসহ ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজার, হারগাজা, বগাইছড়ি, লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, ছোটবমু, বড় বমু, গজালিয়া ইউনিয়নের গাইন্দাপাড়া, হেডম্যান পাড়া, ফাইতং ইউনিয়নের শিবাতলী পাড়ার একাংশসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। এসব এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারী সংস্থার কার্যালয়সহ ঘরবাড়ি ও দোকান পাঠ রয়েছে।


আবার ভারী বর্ষণের সাথে সাথে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসও দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সদর ইউনিয়নের মধুঝিরি এলাকায় এক বৃদ্ধ নারী নিহত ও দুই জন আহত হন। এর আগের দফার বর্ষণে লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের লাইনঝিরি ও মিরিঞ্জা এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে।


এছাড়া ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বড়ছন খোলা এলাকার ব্রিজ, পৌরসভা এলাকার মাস্টার পাড়া ও মধুঝিরি আনসার ভিডিপি কার্যালয় সংলগ্ন পূর্বপাড়া শাহাদাতের বাড়ির পাশের ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানের ব্রিজ কালভাটগুলো পানির স্রোতের টানে দেবে যায়। নদী খাল ও ঝিরি গুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া লামা আলীকদম, লামা ফাঁসিয়াখালী, লামা রুপসীপাড়া সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে ও পাহাড় ধসে পড়ে উপজেলা সদরের সাথে বিভিন্ন ইউনিয়নগুলোর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ আছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।


স্থাণীয় লোকজনের দাবি, মাতামুহুরী নদীর তল দেশ ভরাট হওয়ায় ও নদীর চাম্পাতলী এলাকার পশ্চিম পাশ সরু হওয়ার কারণে দ্রুত পানি সরে যেতে না পারায় এ বন্যার সৃষ্টি হয়। গজালিয়া ইউনিয়নের সাফমারা ঝিরি এলাকার ঝিরিটি কেটে দিয়ে নদীর গতি পরিবর্তন করলে বন্যা থেকে রক্ষা পাবে লামা পৌরসভা ও বমুবিলছড়ি এলাকার প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।


রবিবার (১৪ জুলাই) বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভারী বর্ষণ বন্ধ হলে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়।


লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া জানান, আবারো ভারী বর্ষণের কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমুহ প্লাবিত হয়েছে।পাহাড়ি ঢলের পানিতে বার বার পৌর শহর প্লাবিত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। লামাকে বন্যামুক্ত করতে নদীর গতি পরিবর্তনের জোর দাবি জানান জাপান বড়ুয়া।


বিবার্তা/আরমান/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com