শিরোনাম
লামায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০১৯, ১৫:২২
লামায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বান্দরবানের লামা উপজেলায় বন্যার পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি হয়েছে। উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলা মাতামুহুরী নদীর পানি নেমে যাওয়ায় শুক্রবার ভোর রাতে প্লাবিত এলাকা থেকে দ্রুত গতিতে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়।


এতে সকাল থেকে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা মানুষগুলো। তবে পানি কমার পর রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িগুলোতে জলকাদায় ভরে থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।


এ দিকে একদিন বন্ধ থাকার পর উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়ন ও সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। তবে বন্যা ও পাহাড় ধসে ছয় শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাট, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ফসল ও মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।


সূত্র জানায়, ৫ জুলাই দিবাগত রাত থেকে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। এতে পৌরসভা এলাকা, লামা সদর, রুপসীপাড়া, গজালিয়া ও ফাঁসিয়া-খালী ইউনিয়নের নিচু এলাকার ঘরবাড়ি, দোকান পাঠ, সরকারি বেসরকারি কার্যালয় পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়।


এ সময় পাহাড় ধস ও বন্যার ক্ষতি এড়াতে পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের ৫৫টি স্কুল ও মাদ্রাসাকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এতে শতাধিক পরিবারের কয়েকশ মানুষ আশ্রয় নেয়। উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সেনাবাহিনী এসব পরিবারকে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি দিয়ে সহায়তা করেন।


এ দিকে পাহাড়ি ঢলের স্রোতের পানিতে তলিয়ে থাকায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানের রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।


এ ছাড়া লামা-আলীকদম, লামা-ফাঁসিয়া-খালী সড়ক ও লামা-রুপসীপাড়া সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে বৃহস্পতিবার সড়কের যান চলাচল বন্ধ ছিল। পৌরসভা মেয়রের উদ্যোগে এসব পরিষ্কার করা হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।


শুক্রবার সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, যারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে তারা পানি নেমে যাওয়ার পর পর নিজ ঘর বাসযোগ্য করার জন্য কাজ শুরু করছেন। বাজারের ব্যবসায়ীদের পুনরায় মালামাল দোকানে তুলতে দেখা যায়।


তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন নুনারঝিরি দু’পাড়ের বাসিন্দারা। ঝিরিটি অপরিকল্পিতভাবে খননের কারণে দু’পাড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে, কিছু কিছু এলাকায় ভেঙ্গেও পড়েছে। সেই সাথে এ ঝিরির ওপর স্থাপিত বেশ কয়েকটি ব্রিজ, কালভার্টের নিচ ও পাশ থেকে মাটি সরে দেবে গেছে। ফাঁসিয়া-খালী ইউনিয়নের বড়ছন খোলা এলাকার ব্রিজটিও পানির স্রোতের টানে দেবে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতেও হাজারো মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।


এ দিকে উপজেলার বেশ কয়েকটি মৎস্য খামার ও অর্ধশত একর ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগ।



পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা দিপু রানী মল্লিক, আয়েশা বেগম, নুর জাহান ও মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বাড়িতে পানি উঠায় আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে স্ব পরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলাম। ভিটে থেকে পানি নেমেছে শুনে দেখতে আসছি। মেরামত করে বসবাসের উপযোগী করছি। কিন্তু এখানে রাত কাটানো যাবে না। পানি আরো না কমলে ঘরে থাকা যাবে না।



বন্যা পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতি হয়েছে জানিয়ে লামা পৌরসভা মেয়র জহিরুল ইসলাম জানান, আশ্রিতরা ঘরে ফিরে গেছে। তবে কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে প্রাথমিকভাবে পৌরসভা এলাকার ৫০০ ঘরবাড়ী, দেড় শতাধিক দোকানপাট ও সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। একই সময় বিভিন্ন স্থানে ৮০টির মত বসত-ঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে।


এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি দেখা দেয়। কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিপাতে ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলায় ঘরবাড়ি, রাস্তা ঘাট, কালভার্ট ব্রিজ, সবজি ও মাছ চাষের ক্ষতি হয়েছে।


বিবার্তা/আরমান/তাওহীদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com