শিরোনাম
যমুনার ভাঙনে গৃহহীন হচ্ছে পূর্বপাড়ের মানুষ
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০১৯, ১২:১৩
যমুনার ভাঙনে গৃহহীন হচ্ছে পূর্বপাড়ের মানুষ
মোল্লা তোফাজ্জল
প্রিন্ট অ-অ+

প্রমত্তা যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে প্রতিদিন গৃহহীন হচ্ছে যমুনার পূর্বপাড়ের মানুষ। নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে শতাধিক বড়-ছোট পাকা ও আধাপাকা স্থাপনাসহ ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে।


আরো তিন শতাধিক ঘরবাড়ি যমুনার ভাঙনের কবলে রয়েছে। যদিও ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড। সংস্থাটির প্রকৌশলীদের দায়িত্বহীনতার কারণে দিনদিন ভেঙে যাচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি।


সরেজমিনে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নের গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া ও ভালকুটিয়া এলাকায় কয়েকদিনে শতাধিক ঘর-বাড়ি যমুনা গর্ভে চলে গেছে।


উপজেলার গোবিন্দাসী হতে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত প্রায় ১৮টি বালুর ঘাট তৈরি করেছে ক্ষমতাশীল বালু ব্যবসায়ীরা। এই ঘাট থেকে শত শত ট্রাকযোগে সরকারি রাজস্ব ছাড়াই বালু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া যমুনা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ভিট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে প্রতিদিন।


উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়ন যমুনা নদী ঘেরা। ২০১১ সালে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়িসহ কয়েকটি গ্রামে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। যা বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে। নদীর এই ভাঙনরোধে স্থানীয়রা একাধিকবার মানববন্ধন, স্বারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত নদী ভাঙনরোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড।


এই উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ভাঙনের শিকার। গত কয়েক বছরে যমুনা নদীর ভাঙনে বেশ কয়েকটি গ্রাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। ভেঙে গেছে গোবিন্দাসী হতে বঙ্গবন্ধু সেতু গাইড বাঁধ। এছাড়া প্রতিবছরই নতুন নুতুন এলাকায় আঘাত আনছে প্রমত্তা যমুনা। এতে গৃহহীন হচ্ছে শত শত পরিবার।


যমুনা নদীর অব্যাহত ভাঙন ক্রমশ পূর্বদিকে ধাবিত হচ্ছে। মুল নদীতে জেগে উঠছে বিশাল বিশাল চর। যদিও ভাঙন কবলিত মানুষের দাবি, যমুনা নদী হতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এতে নদী কয়েকটি চ্যানেলে রুপ নিচ্ছে।


খানুরবাড়ি গ্রামের আল মামুন জানান, ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে এখানে বসবাস করছি। গত বছর বাড়ির কিছুটা অংশ ভেঙে গেছে। এ বছরও বাড়ির অর্ধেক যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাড়ি হতে নদীর দূরত্ব ছিল প্রায় তিন কিলোমিটার। নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এমন ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।



ভাঙনকবলিত অনেকেই জানান, সম্প্রতি খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া ও ভালকুটিয়া গ্রামের ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। একদিকে অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন, অন্যদিকে নদী শাসন বা খনন না করায় যমুনা নদীতে ভাঙন অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ জানান, উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে যমুনা নদী ভাঙনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। অর্জুনা ইউনিয়নের কুঠিবয়ড়া এলাকায় গাইড বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে।


টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, যমুনা নদীতে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া ভাঙন এলাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। এরপর ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com