টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচতে কলেজ ছাত্রীর দোতলা থেকে লাফিয়ে আত্মরক্ষার ঘটনায় করা মামলায় আফিয়া বেগম (৩০) নামের এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মির্জাপুর উপজেলার পাকুল্যা বাজারে অবস্থিত আব্দুল হক ভবনে অবস্থিত যুগবাণী সমাজকল্যাণ নামে এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এরিয়া ম্যানেজার তানজিরু হাসান জীবন নিজেকে এশিয়া ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় মেয়েদের চাকরি দেয়ার কথা বলে অফিসে নিয়ে এসে কুপ্রস্তাবসহ ধর্ষণের চেষ্টা করত। আর তাকে সহযোগিতা করত ওই অফিসের নারী কর্মী আফিয়া বেগম।

এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার সকালে ওই সংস্থার নারী কর্মী আফিয়াকে দিয়ে এক কলেজ ছাত্রীকে তার কক্ষে ডেকে নেয় জীবন। কেউ না থাকার সুযোগে মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে সে।

পরে ছাত্রীটি কক্ষ থেকে বের হয়ে আসতে চাইলে মূল দরজা বন্ধ পায়। এ সময় ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচতে বারান্দার দরজা দিয়ে পাশের একটি ডোবায় লাফিয়ে পড়ে সে। পরে স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় কলেজ ছাত্রীর মা বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় দুইজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করলে আফিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে ঘটনার মূল আসামিকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে পরিবার ও এলাকাবাসী।

কলেজ ছাত্রী জানান, বেশ কয়েকদিন আগে পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে গাড়িতে দেখা হয় জীবনের সাথে। তখন সে আমার বিষয়ে জানতে চান। আমি আমার পরিচয় দিলে সে তাকে এশিয়া ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দেয়। ওই ব্যাংকে চাকরির জন্য লোক নেয়া হবে বলে জানায় এবং আমাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে সে।

২৬ মে ফোন করে তার এক নারী কর্মীকে পাঠাবে তার সঙ্গে আমাকে অফিসে যেতে বলে। আমি বিশ্বাস করে অফিসে যাই। অফিসে যাওয়ার পর ওই নারী কর্মী বাইরে বের হয়ে যায়। এ সময় জীবন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে এখান থেকে বের হতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেয় সে।

পরে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন আমি বের হতে চাইলে মূল দরজা বন্ধ পাই। এ সময় পাশের আরেকটি দরজা খুলে দেখি বারান্দা। তখন কোনো উপায় না পেয়ে আমি দোতলা থেকে লাফ দেই। এরপর আমি আর কিছু জানি না। জ্ঞান ফিরলে আমি দেখি হাসপাতালে।

ছাত্রীর মা জানান, আমার মেয়েকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ডেকে নেয়া হয়েছিলো। পরে ধর্ষণ করার চেষ্টা করলে ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচতে দোতলা থেকে লাফ দিয়েছে। বাঁচবে কিনা মরবে এসব চিন্তা না করেই জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়ে ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচতে লাফ দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠিন বিচার দাবি করেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই সংস্থার এক কর্মী বলেন, জীবন স্যার ম্যানেজার হওয়ায় প্রায় সময় অফিসে তিনি একাই থাকতেন। এই সুবাদে মেয়েদের চাকরির দেয়ার কথা বলে অনেক মেয়েকে অফিসে নিয়ে আসতেন। তিনি মেয়েদের ক্ষতি করার চেষ্টা করতেন, কাউকে চাকরি দিতেন না। জীবন এই সংস্থার মালিকের আত্মীয় হওয়ায় এত বড় একটা ঘটনা ঘটানোর পরেও মালিক পক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু ম্যানেজার পরিবর্তন করেছে।

স্থানীয়রা জানান, এই ম্যানেজার জীবন তার সহযোগী আফিয়ার মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে আসতো চাকরির কথা বলে। তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। যত বাজে আড্ডা আছে সবই হতো এই অফিসে। এসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে প্রধানকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। এই জঘন্য ঘটনার পর তিনি অফিসে এসেছিলেন। এরপর থেকে জীবনকে আর অফিসে আসতে দেখা যায়নি। নতুন এক ম্যানেজার আসছে।

এ ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার এক প্রকার চেষ্টা করছে মালিক পক্ষ। এ ঘটনায় জড়িত সকল সদস্য ও এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ এখান থেকে এই প্রতিষ্ঠান অপসারণের দাবি জানান স্থানীয়রা।

এদিকে কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসক ডা. প্রত্যয় বড়ুয়া বলেন, ওই কলেজ ছাত্রীকে পরীক্ষা করার পর মেরুদণ্ডের একটি হাড় ফাটল ও তার পায়ে কাটা পেয়েছি। চিকিৎসা শেষে তাকে এটি বেল্ট দেয়া হয়েছে এবং দেড় মাসের বিশ্রামে থাকতে বলা হয়েছে। তিন সপ্তাহ পর তাকে দেখা করতে বলা হয়েছে। তখন দেখে পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া এখন মেয়েটি আগের থেকে সুস্থ আছে।

এ বিষয়ে মির্জাপুর থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুস সামাদ বলেন, মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় জীবন ও আফিয়াকে আসামি করে মামলা করলে পুলিশ আফিয়াকে গ্রেফতার করে। অপর মূল আসামি পলাতক আছে। তাকে ধরতে চেষ্টা করছে পুলিশ।

বিবার্তা/তোফাজ্জল/তাওহীদ/জাকিয়া