শিরোনাম
দম ফেলার সময় নেই টাঙ্গাইলের মুড়ি ব্যবসায়ীদের
প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৯, ১৯:৫২
দম ফেলার সময় নেই টাঙ্গাইলের মুড়ি ব্যবসায়ীদের
ফাইল ছবি
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পবিত্র রমজান মাসের ইফতারিতে রকমারি উপাদানের মধ্যে মুড়ি অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ। মুড়ির চাহিদা বছরব্যাপী থাকলেও রোজার সময় উৎপাদন এবং বিক্রি বহুগুণে বেড়ে যায়। তাই মুড়ি ব্যবসায়ীরা বছর জুড়ে অপেক্ষায় থাকেন রমজান মাসের জন্য। আবার অনেকে শুধুমাত্র এই মাসেই মুড়ি উৎপাদন এবং বিক্রি করে থাকেন। এখন মুড়ি তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীদের দম ফেলার ফুসরত নেই।


টাঙ্গাইলসহ দেশের প্রায় ১০ জেলায় মুড়ি সরবরাহ হয় কালিহাতীর নারান্দিয়া থেকে। এখানকার উৎপাদিত মুড়ির অনেক সুনাম রয়ছে। মুড়ি উৎপাদনের সঙ্গে নারান্দিয়ার মানুষ অনেক পূর্বে থেকেই জড়িত। এখানে দুইভাবে মুড়ি উৎপাদিত হয়, হাতে ভাজা ও মেশিনের সাহায্যে। মুড়ি উৎপাদনকারী এলাকাগুলোর মধ্যে টাঙ্গাইলের নারান্দিয়া শীর্ষে।


উপজেলার নারান্দিয়ায় ৫টি মিলে মেশিনের সাহায্যে এবং শতাধিক বাড়িতে হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদিত হয়। মেশিনের সাহায্যে মুড়ি উৎপাদন নতুন সংযোজন হলেও অনেক আগ থেকে হাতে ভাজা মুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন বহু পরিবার। বিশেষ করে মোদক সম্প্রদায়।


নারান্দিয়া ইউনিয়নের নগরবাড়িতে ২টি, দৌলতপুরে ২টি মোট ৪টি মিলে ৫টি মেশিনের সাহায্যে মুড়ি ভাজা হয়।



সততা মুড়ির মিলের স্বত্বাধিকারী শংকর চন্দ্র মোদক বলেন, ৫০ কেজি চালের বস্তায় ৪৪-৪৫ কেজি মুড়ি হয়। প্রতি কেজি মুড়ি আমরা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করি। পাইকাররা আবার সেই মুড়ি প্রতি কেজি কমপক্ষে ৬৫-৭৫ টাকা দরে খুচরা বিক্রি করেন। রমজান মাসে প্রতিদিন ৫টি মিলে ১৫০ বস্তারও বেশি চালের মুড়ি উৎপাদিত হচ্ছে। প্রায় ৪ লাখ টাকার মেশিনে ভাজা মুড়ি প্রতিদিন কেনাবেচা হয় এই এলাকায়।


এদিকে মেশিনের সাহায্যে বিপুল পরিমাণ মুড়ি প্রতিনিয়ত উৎপাদিত হলেও হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। মেশিনে ভাজা মুড়ি সাদা ও লম্বা করতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ইউরিয়া কিংবা সোডা ব্যবহারের অভিযোগ থাকায় একশ্রেণির মানুষ সর্বদাই হাতে ভাজা বিষমুক্ত মুড়ি খেতে পছন্দ করেন।


কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া, মাইস্তা, নগরবাড়ি, দৌলতপুর, লুহুরিয়া ও সিংহটিয়াসহ প্রায় পনেরটি গ্রামের কয়েক’শ পরিবার হাতে ভেজে মুড়ি তৈরি করে থাকে। একজন ব্যক্তি ১ দিনে এক থেকে দেড় মণ চালের মুড়ি ভাজতে পারেন। প্রতি মণ চালে ২২ থেকে ২৩ কেজি মুড়ি হয়। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারি ৫৫-৬৫ টাকা এবং খুচরা ৭০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মূলত গ্রামের নারীরাই হাতে ভাজা গুণগত মানসম্মত মুড়ি তৈরি করেন।



দৌলতপুর গ্রামের মিনতি রানী বলেন, আমরা বংশ পরম্পরায় এই মুড়ি ভাজা ও ব্যবসার সাথে জড়িত। ধান সিদ্ধ করে রোদে শুকানোর পর আবার সেই ধান মেশিনে মাড়াই করে মুড়ি ভাজার জন্যে চাল তৈরি করে থাকি। পরে সেই চাল দিয়ে লবণ জলের মিশ্রণে আগুনে তাপ দিয়ে মুড়ি ভাজা হয়ে থাকে। এবার বাজার দর অন্য বছরের তুলনায় একটু ভালো। অনেক সময় গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি এবং সরবরাহ কম হয়।


তাদের দেয়া তথ্যমতে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টাকার হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদন এবং কেনাবেচা হয়। তবে পরিশ্রমের লাভ বেশির ভাগই চলে যায় মধ্যসত্বভোগীদের পকেটে। রমজান মাসে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা পিকআপ, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে বস্তাভর্তি মুড়ি কিনে টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত এলাকায় বিক্রি করেন। যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল থাকায় পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, বগুড়া ও গাজীপুরে নারান্দিয়ার মুড়ি সরবরাহ হয়ে থাকে।


লোকনাথ মুড়ির মিলের স্বত্বাধিকারী সুনিল চন্দ্র মোদক বলেন, আমরা অনেক সময় মোবাইলেও মুড়ির অর্ডার নিয়ে সরবরাহ করে থাকি। তাছাড়া নির্দিষ্ট বাজারে স্থায়ী গ্রাহকরা মুড়ি ক্রয় করে থাকেন।



রমজানে ৬ লাখ টাকার মুড়ি প্রতিদিন মেশিনে ও হাতে ভেজে তৈরি হলেও বছরের অন্য সময়ে অর্ধেকে নেমে আসে। ৪টি মিলে ৪০জন শ্রমিক এবং শতাধিক পরিবার প্রত্যক্ষভাবে ও বিপুল সংখ্যক মানুষ পরোক্ষভাবে মুড়ি ব্যবসার সাথে জড়িত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে রমজানে কাজের চাপে দম ফেলার সময়টুকু পায় না মুড়ি উৎপাদনকারীরা।


কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, টাঙ্গাইল তথা বাংলাদেশের মধ্যে মুড়ি উৎপাদনের অন্যতম স্থান কালিহাতীর নারান্দিয়া। এখানকার উৎপাদিত লাখ লাখ টাকার মুড়ি সারাদেশে সরবরাহ হচ্ছে। এটি এক প্রকার কুটিরশিল্প। মানুষের চাহিদা পূরণে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ প্রয়োজন। বিশেষ করে হাতে ভাজা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।


এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক কালিহাতীর সন্তান আবু নাসের বলেন, নারান্দিয়ায় মুড়ি কেনাবেচার একটি নির্দিষ্ট বাজার স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। সরকার থেকে হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদনকারী ব্যক্তি এবং পরিবারগুলোকে বিশেষ ঋণ সুবিধা দেয়া প্রয়োজন।



এবিষয়ে কালিহাতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, নারান্দিয়ার হাতে ভাজা বিশুদ্ধ মুড়ির চাহিদা দেশজুড়ে। তাদের টিকিয়ে রাখতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/আকবর/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com