শিরোনাম
কারাগারে সিদ্ধান্ত হয় নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৩৩
কারাগারে সিদ্ধান্ত হয় নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার
নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন
ফেনী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে মামলার এজহারভুক্ত দুই আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম।


ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন দু’জনে। রবিবার দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয় নুর ও শামীমকে। এরপর দু’জনের জবানবন্দি গ্রহণ শুরু হয়, রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত চলে তা।


পরে রাত ১টার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) তাহেরুল হক চৌহান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।


তিনি বলেন, পিবিআই এ মামলার দায়িত্ব পাওয়ার চার দিনের মধ্যে (১০-১৪ এপ্রিল) আমরা ঘটনার মূল নায়ক, যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করেছি। তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনের মধ্যে থেকে আদালতের কাছে তাদের হাজির করেছেন। আদালত দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সিআরপিসির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, আসামি দু’জন আদালতের কাছে তাদের স্বীকারোক্তি উপস্থাপন করেছেন। তারা পুরো বিষয়টি খোলাসা করেছেন। একেবারে কিভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে, কারা ঘটিয়েছে, কোন আঙ্গিকে ঘটিয়েছে, বিষয়গুলো এসেছে। দ্রুত আপনারা জানবেন।


সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, নুর ও শামীম অপরাধ স্বীকার করেছে, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এখানে কয়েকজন সংশ্লিষ্ট ছিল, পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছে। তারা জেলখানা (কারাগারে বন্দি হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা) থেকে হুকুম পেয়েছে। এই বিষয়গুলোর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।


হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তাহেরুল হক চৌহান বলেন, এখন পর্যন্ত ১৩ জনের কথা বলা হচ্ছে। আরও কিছু নাম বিচ্ছিন্নভাবে এসেছে। আমরা সেসব যাচাই-নিরীক্ষা করবো।


যে চারজন আগুন দিয়ে নুসরাতকে পুড়িয়েছে, তারা গ্রেফতার আছে কি-না, জানতে চাইলে পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা দুইজনকে গ্রেফতার করেছি। বাকি দুইজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। শিগগির ভালো খবর পাবেন।


এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নুর উদ্দিন ঘটনার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। নুর বলেছে, এপ্রিলের ১ ও ৩ তারিখ কারাগারে আটক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সঙ্গে দেখা করে সে। সেখানেই নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অধ্যক্ষের পরামর্শেই নুসরাতের গায়ে আগুন ধরানো হয়।


গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।


আগুনে প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যায়।


শ্লীলতাহানির মামলায় আগে থেকেই কারাবন্দি ছিলেন সিরাজ উদদৌলা। হত্যা মামলা হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৩ জন গ্রেফতার হয়েছে।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com