
রাজবাড়ীর পাংশা পৌরসভার মৈশালা (পালপাড়া) গ্রামের গৃহবধূ দীপা রানী পাল (২২) দুই পুত্র সন্তানের জননী। গত বুধবার (১১ জুন) রাত সাড়ে ৯টা দিকে সে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো।পরদিন বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ভোরে ৩ যুবক দীপা রানী পাল কে বাড়িতে রেখে যায়।এর কয়েক ঘন্টা পর ঘরের সিলিংয়ের হুকের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে দীপা রানী পাল।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মৈশালা (পালপাড়া) গ্রামের সিঙ্গাপুরপ্রবাসী মিঠুন পালের সাথে ৬ বছর আগে দীপা রানী পালের বিয়ে হয়।তাদের ঘরে পাঁচ বছর বয়সী যমজ দুইটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল। একমাত্র শাশুড়ী সাধনা রানী পালের সাথে দীপার খুব ভালো সখ্যতা ছিল।তাহলে দীপা রানী কেনো আত্মহত্যার পথ বেছে নিল?
পরিবারের তরফ থেকে জানা যায়, কিছুদিন যাবত দীপা স্বামীর বাড়ির পাশের এলাকার গাড়ি চালক সাগর খানের সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত বুধবার (১১ জুন) রাত সাড়ে ৯ টায় কাউকে কিছু না বলে সাগরের ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ির বাইরে বেড় হয়। সাগর প্রলোভন দেখিয়ে দীপা কে বাড়ি থেকে কিছু দূরে নিয়ে যায়। দীপার স্বামী মিঠুন পাল ও শাশুড়ী সাধনা রানী বাড়ির বাইরে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। ঘন্টা দুই পরে মো. সালাম, মো. মাসুদ ও মো. শাহাদাত নামের তিন যুবক রাস্তা থেকে মিঠুন পাল কে ডাকতে থাকে। মিঠুন স্ত্রী দীপা কে খুঁজতে বের হয় সে সময় বাড়ি ছিল না। শাশুড়ী সাধনা রানী তাদের কে বলে মিঠুন বাড়ি নেই। এসময় ওই তিন যুবক তার কাছে বৌমা কোথায় জানতে চাইলে সে (শাশুড়ী) জানালা বন্ধ করে দেয়। মিঠুন বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রী (দীপা) কে না পেয়ে বাড়ি ফিরে আসে। রাত ১ টার দিকে একটা ফোন নাম্বার থেকে মিঠুন কে কল করে টাকা দাবী করে।
তবে সূত্র বলছে,দীপা প্রেমিক মো. সাগরের প্রলোভনে বাড়ি ছাড়ার কিছু সময় পরে ওই তিন যুবক মো. সালাম, মো. মাসুদ ও মো. শাহাদাত) তাকে তাদের আওতায় নিয়ে নেয়। তারা মোটরসাইকেল যোগাযোগে দীপা কে কালুখালী উপজেলার কোন এক স্থানে নিয়ে সঙ্গবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। এসময় তার কানের দুল, হাতের শাখা ও নগদ অর্থ নিয়ে নেয় তারা। সকাল হওয়ার আগেই দীপাকে স্বামীর বাড়ি রেখে যায় ওই তিন যুবক। ধারণা করা হচ্ছে দীপা নিজের সম্ভ্রম হারিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
পর দিন ভোরে দীপা রানী পাল কে বাড়িতে রেখে যাওয়া তিন যুবকের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যদের কাছে তাদের অবস্থান জানতে চাইলে তার জানেন বলে অস্বীকার করেন।
তবে প্রেমিক সাগর খানের মায়ের দাবী,তাদের ছেলের কাছে থেকে মেয়েটাকে কেড়ে নিয়ে যায় ওই তিন যুবক। এমনকি তারা তাদের ছেলেকে মেড়ে টাকা-পয়শা কেড়ে নিয়েছে। তাদের কারনেই ওই মেয়ে আত্নহত্যা করেছে।
এই ঘটনার দুইদিন পরে শুক্রবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় দীপা রানীর (নিহত) পিতা বাদী হয়ে পাংশা মডেল থানার মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তুলে মো. সাগর খান, মো. সালাম, মো. মাসুদ ও মো. শাহাদাত এর নাম উল্লেখসহ ২/৩ জনকে অজ্ঞাত করে মামলা দায়ের করেছেন।
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন,দীপার পিতা বাদী হয়ে মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তুলে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত করে এজাহার দায়ের করেছেন। আমরা আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আসামীদের মধ্যে যে কোন একজন কে গ্রেফতার করতে পারলে সত্য বেড়িয়ে আসবে।
বিবার্তা/মিঠুন/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]