অটোরিকশা চালক থেকে বিমান নির্মাতা দহগ্রামের সোহেল রানা
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ১৪:০৩
অটোরিকশা চালক থেকে বিমান নির্মাতা দহগ্রামের সোহেল রানা
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই ফোম, কর্কশিট, সাইকেলের এস্পোক, ফ্যান মটর, স্যান্ডেলের সোল, জি আই তার, আটা, বাসসহ বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে বিমান তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন অটোরিকশা চালক সোহেল রানা।


সোহেল রানা ইতিমধ্যে পরপর দুইটি বিমান তৈরি করে সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করেন। রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিমানটি পরিচালিত হয়। তার তৈরি বিমানটি এক নজর দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। তার স্বপ্ন সে বিমানের পাইলট হবেন। কিন্তু তার স্বপ্ন বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভাব অনটন। তারপরও সবার সহযোগিতা নিয়ে সে পড়াশোনা করে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়।


জানা গেছে, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বহুল আলোচিত দহগ্রাম- আঙ্গোরপোতা ভূখণ্ডের গুচ্ছগ্রাম বাজারের ইউনুস আলী ও শাহিনুর বেগমের ছেলে সোহেল রানা। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।


বাবা ইউনুস আলী গ্রামে গ্রামে গিয়ে ফেরি করে বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করেন। মা শাহিনুর বেগম গৃহিণী। অভাবের সংসার। একসময় সোহেল রানা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি অটো রিকশা কিনেন। সেই অটো রিকশাটি চালিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ ও সংসারের হাল ধরেন সোহেল রানা।


সোহেল রানা জানায়, ছোট থেকেই বিমান তৈরির স্বপ্ন ছিল তার। ৫ বছর ধরে ইউটিউব ও মানিকগঞ্জের জুলহাসের বিমান তৈরি দেখে আরও প্রচুর ইচ্ছা জাগে। অভাব-অনটনের সংসারে বিমান তৈরির টাকা কোথায় পাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও থেমে যায়নি সোহেল রানা। প্রতিদিন অটো চালিয়ে ৫ থেকে ৭শ টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে ঋণের পরিশোধ ও বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালায়।



বর্তমানে মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করে দৈর্ঘ্য ২১ ইঞ্চি প্রস্থ ২৮ ইঞ্চি ওজন ৩৮০ গ্রাম বিমান তৈরি করে সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করেন। এর আগে ২০২৪ সালে দৈর্ঘ্য ২৮ ইঞ্চি প্রস্থ ৪২ ইঞ্চি বিমান তৈরি করেন। সেটিতেও সফল হন।


বর্তমানে বিমানটি ১২ থেকে ১৫ মিনিট এক কিলোমিটার আকাশের উপরে উড়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার যেতে পারবে। রিচার্জেবল লিপো ব্যাটারির শক্তিতে চালিত বিমানটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই বিমানটিতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা লাগালে দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূর থেকে অনায়াসে দেখা যাবে।


সোহেল রানা আরও বলেন, আমার স্বপ্ন আমি পড়াশোনা করে পাইলট হতে চাই। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন। বিমান তৈরির কোনো সহযোগিতা পেলে আমি আরো ভালো কিছু করে দেখাতে পারবো। পাশাপাশি বিমান তৈরি করে বাংলাদেশের জন্য কাজে লাগাতে চাই।


সোহেল রানার মা শাহিনুর বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। অভাব অনটনের কারণে আমার ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ছোট থেকে সোহেল রানা বিভিন্ন খেলনা বিমান তৈরি করে। এজন্য আমরা কেউ কিছু বলি না।


দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য রুনা লায়লা বলেন,ছোট থেকেই সোহেল মেধাবী। আর্থিক কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তার। বর্তমানে সে অটো চালায় পাশাপাশি বিমান তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তার বিমান উড়ানো দেখতে শত শত মানুষ ভিড় জমায়।


এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিল্লুর রহমান বলেন,সোহেল রানার এই প্রতিভা দেখে আমরা সন্তুষ্ট। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।


বিবার্তা/হাসানুজ্জামান/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com