বাগেরহাটে
ভারতীয় দুই নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৫, ২১:০৭
ভারতীয় দুই নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
বা‌গেরহাট প্রতি‌নি‌ধি
প্রিন্ট অ-অ+

বাগেরহাটে ভারতীয় দুই নাগরিককে জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।


১৩ মে, মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. সাইদুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।


আসা‌মিরা হলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তা বর্তমান বরিশাল নির্বাচন কার্যালয়ের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার, চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন ও চিতলমারী উপজেলার আড়য়াবর্ণি গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন মোল্লা। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিনকে।


মামলার বাদী বাগেরহাট দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. সাইদুর রহমান মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, চিতলমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের আড়য়াবর্ণি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডলের দুই ছেলে ফণিভূষণ মন্ডল ও প্রতুল মন্ডল বহু বছর আগে ভারতে চলে যান। সেখানে গিয়ে তারা ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। এই দুই ভাইয়ের চিতলমারীর আড়–য়াবর্ণি গ্রামে থাকা পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রিতে সমস্যা তৈরি হওয়ায় তাদের ভারত থেকে ডেকে আনেন স্থানীয় মো. মোশাররফ হোসেন মোল্লা নামে এক ব্যক্তি। ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারিতে ফণিভূষণ মন্ডল এবং ১৯৫৩ সালের ৪ এপ্রিল প্রতুল মণ্ডলের জন্ম তারিখ উল্লেখ করে নির্ধারিত ফরমে ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের চারদিন পরে তাদের দুই ভাইকে জন্ম নিবন্ধন দেন চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন। এরপর জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ভোটার নিবন্ধন ফরমে ভোটার নিবন্ধনের জন্য বাগেরহাট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন তারা। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাচন অফিস হতে তার নামে জাতীয় পরিচয়পত্র (নং ১৯৪৮০১২০৮০০০০০০০১) ইস্যু করা হয়।


অনুসন্ধানকালে ফণিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের নামে সৃষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফণিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের জন্ম তারিখ ০১/০১/১৯৪৮। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয় ২০১৭ সালে যা তার জন্মের ৬৯ বছর পর। এতদিনে ভোটার তালিকা হতে বাদ পড়ার কারণ হিসেবে ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৩২ নং ঘরে উল্লেখ করা হয়েছে চিকিৎসার জন্য এলাকার বাইরে থাকায় তিনি আগে ভোটার নিবন্ধন করতে পারেননি। ভোটার নিবন্ধন ফরম নং: ৪১০১০৮৫৪ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৫নং ঘরে ফণিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের বাবার নাম মৃত শশধর মন্ডল দেয়া হলেও তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম মৃত রবীন্দ্রনাথ মন্ডল। ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৭ নং ঘরে বাবার মৃত্যু হয়েছে ১৯৪৪ সালে এবং ১৫ নং ঘরে ফণিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের জন্মতারিখ ০১/০১/১৯৪৮।


অর্থাৎ বাবার মৃত্যুর চার বছর পরে ফনিভূষনের জন্ম হয়। ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৩৪ নং ঘরে শনাক্তকারী হিসেবে সুষেন মণ্ডলের জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ব্যবহার করে তার স্বাক্ষর জাল করে তাকে সনাক্তকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। ওই ভোটার নিবন্ধন ফরমে ফণিভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয়েছে বাগেরহাট পৌরসভার সোনাতলা গ্রাম। এই ঠিকানায় ওই নামে কোন ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৪০ নং ঘরে যাচাইকারীর ঘর ফাঁকা থাকলেও ৪১ নং ঘরে যাচাইকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার ও স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে যে নম্বরটি দেওয়া হয়েছে তা তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদারের। তিনি ওই সময়ে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দিলীপ কুমার হাওলাদার অসৎ উদ্দেশ্যে মোশাররফ হোসেন মোল্লার সাথে পারস্পরিক যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উক্ত ব্যক্তির নামে বিধিবহির্ভূতভাবে জাল জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র সৃজন করেছেন যা দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই দণ্ডবিধির ৪২০,৪৬৭, ৪৬৮,৪৭১,১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে এই মামলাটি করা হয়েছে।


মামলার আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি। যার কারণে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।


বিবার্তা/রাজু/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com