নরসিংদীতে
উদ্ধার হওয়া গাঁজা বিক্রির অভিযোগে দুই ইন্সপেক্টরকে বদলি
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১৮:৪৫
উদ্ধার হওয়া গাঁজা বিক্রির অভিযোগে দুই ইন্সপেক্টরকে বদলি
নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নরসিংদীতে উদ্ধার হওয়া গাঁজা বিক্রির অভিযোগে দুই ইন্সপেক্টরকে বদলি করা হয়েছে। তারা হলেন নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. কামরুজ্জামান ও কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক ইন্সপেক্টর খন্দকার জাকির হোসেন। তাদের বিরুদ্ধে উদ্ধার হওয়া ৯৬ কেজি গাঁজা প্রায় ১৫ লাখ টাকায় গোপনে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানির পর প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে তাদেরকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ঢাকার রেঞ্জ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।


শনিবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যায় পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নরসিংদীর দুই পুলিশ পরিদর্শককে ঢাকা রেঞ্জ অফিসে সংযুক্তির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এর আগে দুপুরে নরসিংদী পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান স্বাক্ষরিত একটি পত্রে নরসিংদী পুলিশ লাইনসে তাদের বদলি করা হয়।


চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি শিবপুর উপজেলার সৃষ্টিঘর আটাশিয়া এলাকায় মনির হোসেনের লটকন বাগান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৯৬ কেজি গাজা উদ্ধার করেন তৎকালীন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার। ঘটনাস্থল থেকে ৯৬ কেজি গাঁজা জব্দ করে নরসিংদী ডিবি অফিসে নিয়ে আসেন এবং ওসি কামরুজ্জামানকে অবহিত করেন। জব্দ তালিকায় ৯৬ কেজি গাঁজার বাজার মূল্য দেখিয়েছেন ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। আইন অনুসারে জব্দকৃত মালামাল জিডি মূলে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ওই সময় আদালতের বিচারক জব্দকৃত ৯৬ কেজি গাঁজা (মাদক) ধ্বংস করে বা পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ প্রদান করেন।


কিন্তু নরসিংদী ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামান নরসিংদী কোর্ট পুলিশের অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) খন্দকার জাকির হোসেনকে ম্যানেজ করে এই ৯৬ কেজি গাঁজা মাধবদী আলগী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী মায়া প্রধানের কাছে বিক্রি করে দেন। প্রতিকেজি গাঁজার বাজার মূল্য ২৫ হাজার টাকা হলেও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীর কাছে ১৫ হাজার টাকা কেজি ধরে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে বলে অভিযোগ ওঠে ওসি কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। পরে সেই টাকা ডিবি’র ওসি ও কোর্টের ওসি ভাগ করে নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে নরসিংদী পুলিশ সুপারের নিকট মৌখিক অভিযোগ করেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য। তবে আদালতের নথিতে দেখা যায় জব্দকৃত ৯৬ কেজি মাদক ধ্বংস করা হয়েছে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে নরসিংদী গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের অফিসার গাফফার আলামত জব্দ করেছে। এরপর তা জব্দ তালিকা করে কোর্টে পাঠিয়েছে। কোর্ট সেগুলো রিসিভ করে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতেই ধ্বংস করেছে। সেই আদেশও আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। এখন কোর্ট ধ্বংস করেছে কি করেনি সেটা তো কোর্টের ব্যাপার। কোর্ট সেটা ধ্বংস করে ভিডিও ফুটেজও দেখলাম আমাকে পাঠিয়েছিল।


তিনি আরও বলেন, কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়ার পর আমাদের দায়িত্ব শেষ। এখন এটা নিয়ে অন্য কোনো কিছু হয়, কেউ যদি কোথাও বিক্রি করে, কেউ যদি কারও নাম বিক্রি করে তাহলে তো সেখানে দেখতে হবে সেটার ডকুমেন্টস কি আছে? আমি অন্যায় কোনো কিছুই করিনি। এখানে আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।


নরসিংদী কোর্ট পুলিশের অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) খন্দকার জাকির হোসেন বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মালামাল ধ্বংস করা হয়েছে। মালামাল আমার হাতে আসেনি, আমার মাধ্যমে যায়নি। শুধু দায়িত্বে ছিলাম বলে আমি বলির পাঠা হলাম। আমি কোনো অপরাধ করিনি।


এ বিষয়ে নরসিংদী কোর্টের মালখানার দায়িত্বে নিয়োজিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হক এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি এ বিষয়টি নিয়ে অনুতপ্ত। এব্যাপারে আগামিতে খুবই সর্তক থাকবেন। ছোট ভাই হিসেবে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে এমন আর হবে না। এব্যাপারে নরসিংদীর পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান জানান, এ ঘটনায় নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো: কলিমুল্লাহকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামি তিন দিনের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট প্রদান করবে।


বিবার্তা/কামরুল/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com