
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা গারো পাহাড়ের কাংশা ইউনিয়নের অন্তত তিন থেকে পাঁচটি এলাকার বিস্তীর্ণ বনভূমিতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত ৩ মার্চ সোমবার হতে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে জঙ্গলে বসবাস করা বিভিন্ন প্রাণী ও বনজ গুল্মলতা আগুনে পুড়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পুড়ছে।
এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার (৮ মার্চ) বিকালে ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের কর্মকর্তা এস বি তানভীর আহমেদ ইমন থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি নং-৩২১) করেছেন।
জিডিতে উল্লেখ করেছেন, ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের কিছু জায়গায় গত ৩ মার্চ বিকাল পাঁচটার দিকে অজ্ঞাতনামা কে বা কাহারা শুকনা পাতায় আগুন লাগিয়ে দেয়। বর্তমানে দিন দিন আগুনের প্রখরতা বেড়েই চলছে। ফলে বনভ‚মির সরকারি সম্পদ ও বন্যপ্রাণীআবাসস্থল ধ্বংসসহ জীব বৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ী ও বন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে শালবাগান ধ্বংস করে বনের জায়গা দখলে নিতেই পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হচ্ছে। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বনে পর্যটক ও গরুর রাখালদের বিচরণ থাকায় তারা যে বিড়ি বা সিগারেট খান, তা থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এ বিষয়ে মাইকিং করে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে।
গত সোমবার থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের হালচাটি, গান্ধীগাঁও, গজনী বিট, দরবেশ টিলা এলাকার বিস্তৃত শালবনে অন্তত ১০ থেকে ১২টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে উপকারী কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়সহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বন্যপ্রাণী ও চারা গাছ পুড়ে যাচ্ছে। তবে আগুন লাগার ঘটনা ঠেকাতে বন বিভাগের কর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল গারো পাহাড়ে শালবন ও বন বিভাগের জমি দখলের তৎপরতা শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে দুর্বৃত্তরা বনের গাছ কাটার সুবিধার্থে ইচ্ছা করে আগুন লাগিয়ে দেয়। শুকনা মৌসুম থাকার কারণে শালবনের ঝরা পাতা এবং শুকনা ছোট গাছপালায় সহজে আগুন লেগে যায়। ফলে বনের শালগাছ সহজে কাটা সম্ভব হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন বার্ড কনজারভেশন সোসাইটির ঝিনাইগাতী শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গারো পাহাড়ের অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত। সংরক্ষিত শাল-গজারি বন ধ্বংস করার অভিপ্রায় বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই কাজগুলো করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। খুবই জরুরি ভিত্তিতে সাধারণ মানুষকে পরিবেশ ও বন সম্পর্কে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।’
ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের কর্মকর্তা এস বি তানভীর আহমেদ ইমন সাংবাদিকদের বলেন, গারো পাহাড়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও গজনি অবকাশ এলাকায় পর্যটকদের আনাগোনা বেশি। এখন শুকনা মৌসুমে শালপাতা খুবই শুষ্ক অবস্থায় বনে পড়ে স্তুপ হয়ে থাকে। বনে পর্যটকদের আনাগোনা ও গরুর রাখালের বিচরণ থাকায় তারা যে বিড়ি বা সিগারেট খান, সেই আগুন থেকেই জঙ্গলে আগুনের সূত্রপাত ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে লাগা আগুন ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় নেভানো হয়েছে। এ ছাড়া মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে।
বিবার্তা/মনির/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]