
টাঙ্গাইলের উপশহর এলেঙ্গা পৌরসভায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ(টিসিবি) কার্ড সংশোধনে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হিসাব রক্ষক মোস্তফার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে খোঁজ নিয়ে এবং প্রতিবেদক ভুক্তভোগী সেজে ফোন করলে এর সত্যতা মিলে। টাকা দাবি করার ৩৯ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এলেঙ্গা পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ৩৮১৪ টি টিসিবি কার্ড রয়েছে।
এদের মধ্যে অনেকেরই মোবাইল নম্বর, ঠিকানাসহ নানা ত্রুটি হয়েছে। এই ত্রুটি সংশোধন করতে এলেঙ্গা পৌরসভার হিসাবরক্ষক গোলাম মোস্তফার নিকট গেলে ভুক্তভোগীদের নিকট থেকে ৩শ’ টাকা নেওয়া হচ্ছে। দরিদ্রদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ায় স্থানীয় ও কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরে প্রতিবেদক এলেঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের শেরপুর এলাকার ভুক্তভোগী সেজে হিসাবরক্ষককে ফোন দিলে এর সত্যতা মিলে। প্রতিবেদকের নিকট থেকেও তিনি টাকা দাবি করেন। টাকা দাবির ৩৯ সেকেন্ডের একটি রেকর্ড রয়েছে এ প্রতিবেদকের নিকট।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার বেশকিছু কর্মচারী জানায়, ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার হাত ধরে হিসাবরক্ষক পদে ১৫ হাজার টাকা বেতনে গোলাম মোস্তফার চাকরি হয়।
গোলাম মোস্তফা পৌরসভার ভাবলা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। তার বাবা একজন কৃষক, সামান্য জমিজমা রয়েছে তাদের। আওয়ামী লীগের আমলে ১২ বছর চাকুরি করে সে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা ভুয়া প্রকল্পের চেক বিতরনের মাধ্যমে টাকা নেওয়া, উন্নয়নের কথা বলে নানাবিধ ভাউচার প্রদান করা। ঠিকাদারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কে টাকা গ্রহনের মাধ্যমে সে কোটিপতি বনে গেছেন। তারা বলেন, এলেঙ্গা শহরের মশাজান এলাকায় ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনেছে। এবং ৪০ লাখ টাকা দিয়ে ভেকু গাড়ি কিনেছেন। আওয়ামী লীগ করায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলেনি। সরকার পতনের পর এবং বর্তমানে দরিদ্রদের টিসিবি কার্ডে টাকা নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে অনেকে মুখ খুলছেন।
তারা আরও জানায়, হিসাবরক্ষক মোস্তফা যে বেতন পায় তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালানো সম্ভব। সংসার চালিয়ে এতকিছু করা অসম্ভব। তাদের দাবি আওয়ামী সরকারে দুর্নীতিপরায়ণ এই হিসাব রক্ষকের যেন বিচার হয়।
ভুক্তভোগী অনেকেই জানায়, আমরা গরীব মানুষ বিধায় সরকার আমার টিসিবির কার্ড দিয়েছেন।
সামান্য ভুলত্রুটি হলেই ১শ’ থেকে ৩শ’ টাকা মোস্তফাকে দিতে হয়। টাকা না দিলে সে আজ না কাল বলে ঘুরাতে থাকে। পরে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে কাজ করিয়ে এনেছি।
অভিযুক্ত এলেঙ্গা পৌরসভার হিসাব রক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি টাকা নেই না তবে আমার নাম করে দুই-একজনে কার্ডধারীদের কাছ থেকে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা করে নেয়। এছাড়াও ছবি তুলতে ১শ’ টাকা লাগে।
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এলেঙ্গা পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ সিফাত বিন সাদেক জানান, বিষয়টি আমি জানি না, আপনার কাছ থেকে শুনলাম। তবে টিসিবি কার্ডধারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া ঠিক না। খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিবার্তা/বাবু/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]