
শীত মৌসুমের শুরু থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী লালিগুড়ের ব্যবসা। মূলত স্থানীয় জাতের আখ থেকে সংগৃহীত রস থেকেই তৈরি হচ্ছে এই সুস্বাদু তরল গুড়। ব্যাপক চাহিদা থাকায় লালি উৎপাদন করে লাভবানও হচ্ছেন এখানকার কৃষক। স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আখ ও লালি উৎপাদনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের কথা।
সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ মাসে রোপণ করা হয় স্থানীয় জাতের আখের চারা। ৮ থেকে ৯ মাস পর চারাগুলো প্রাপ্তবয়স্ক হলে কেটে নেওয়া হয় আখ গাছগুলো। এরপর সেগুলোকে নিয়ে যাওয়া হয় ঘানির কাছে যেখানে মাড়াই করতে অপেক্ষায় রয়েছে মহিষ। পরবর্তীতে আখগাছগুলোকে ছেটে ঘানিতে দেওয়ার উপযোগী করা হয়। পাশেই আরেকজন মহিষটিকে পরিচর্যা করে প্রস্তুত করতে থাকে ঘানি ঘুরানোর জন্য। আখগুলো ঘানিতে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলে পরিচর্যাকৃত মহিষটিকে মাড়াই করার জন্য নিয়ে আসা হয় ঘানির কাছে। মহিষটিকে ঘানিতে বাঁধার পর বেঁধে দেওয়া হয় এর চোখ, যাতে ঘানির চারপাশে ঘুরতে গিয়ে মহিষটি ভারসাম্য হারায় না ফেলে। ঘানি চলার সাথে সাথে আখ থেকে বের হতে থাকে মিঠাকৃত রস। এই রস সংগ্রহ করে ছেঁকে তারপর বিশেষ লম্বা কড়াইতে জ্বাল দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় চুলার উপর। শীত মৌসুমে এমন দৃশ্যই রোজ চোখে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রাম ও আশপাশের এলাকায়। প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা জ্বাল দেওয়ার পর এই আখের রস পরিণত হয় এক ঘন লালচে কালো বর্ণের তরল পদার্থে। এই তরলই সবার কাছে লালি নামে পরিচিত। ২০০ লিটার আখের রস জ্বাল দেওয়ার পর পাওয়া যায় প্রায় ৩৫ কেজি লালি। এই লালি ঠান্ডা করে প্রতি কেজি দেড়শো টাকায় ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। ৩০ শতাংশে ১ কানি হিসেবে আখ উৎপাদনে গড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচে প্রায় ৪০ হাজার টাকা মূল্যের লালি উৎপাদন সম্ভব হয়। এতে কৃষকদের কানি প্রতি প্রায় ২০ হাজার টাকা লাভ হয়ে থাকে।
আখ চাষ ও লালি উৎপাদনে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে উল্লেখ করে এই খাতে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
নতুন জাত ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে লালি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার কথা জানালেন, জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবছর প্রায় ২ কোটি টাকার লালি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিবার্তা/নিয়ামুল/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]