হিলিতে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৪৮
হিলিতে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা
হিলি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর হিলিতে সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন তারা।


মৌচাষিরা জানান, সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহে আর্থিকভাবে তারা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বেকারত্বও দূর হচ্ছে।
অন্যদিকে উপজেলা কৃষি অফিস বলছেন, মৌচাষিরা মধু বিক্রি করে যেমন আয় করছেন। অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।


শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে হিলির বিভিন্ন মাঠে আগত মৌয়ালদের সাথে কথা বললে তারা জানান, সরিষা ক্ষেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ছয় থেকে সাতটি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। বাক্সের ভেতর রাখা হয় একটি রানি মৌমাছি। রানি মৌমাছি থাকায় অন্য মৌমাছিরা আসতে থাকে ওই বাক্সে। প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌচাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন। এতে তারা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এসব মধু স্থানীয়ভাবে ও বোতল জাত করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন মৌচাষিরা।


হাকিমপুর হিলি পৌর শহর থেকে হিলি-বগুড়া মেইন রোডে মাত্র এক কি: মি: দূরে বড় ডাঙ্গাপাড়া ও জালালপুর গ্রামের মাঝে সড়কের পাশে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে শ্যামনগর সাতক্ষীরা থেকে এসেছেন মোঃ আনোয়ার হোসেন।


তিনি সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণের পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে বাক্স তৈরি করা হয়। বাক্সে উপরের অংশটা কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে মোড়ানো থাকে। ভেতরে কাঠের তৈরি ৭টি ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো বিশেষ কায়দায় এক ধরনের সিট লাগানো থাকে। বাক্স গুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌঁমাছি। যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছির দল। রানি মৌমাছির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে পুরুষ মৌমাছিরা। একটি রানি মৌঁমাছির বিপরীতে প্রায় ১ থেকে দেড় হাজারের মতো পুরুষ মৌঁমাছি থাকে একেকটি বাক্সে। কয়েক দিন পরে বাক্স খুলে সিট গুলো মেসিনে দিয়ে তারপর মধু বোতল জাত করা হচ্ছে। প্রতি কেজি মধু ৪০০ টাকা দরে স্থানীয় ভাবে বিক্রি করছি।


হিলি খাটাউচনা রাস্তার ছোট ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মাঠে সাতক্ষীরা থেকে আগত মৌয়াল সোহাগ সরকার বলেন, আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। বাকি আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষিয়ে রাখতে হয়। ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করার উপযুক্ত সময়।


তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। আমি এই মাঠে ১০টি বাক্স ফেলে রেখেছি। প্রতি কেজি মধু বিক্রি করছি ৪০০ টাকা দরে।


সরিষার ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা মধু কিনতে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শ্যামল উড়াও জানান, আমাদের পৌর শহরে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা। খবর পেয়ে খাঁটি মধু নিতে সরাসরি মাঠে এসেছি। এসে বাড়ির জন্য আমি ৬০০ টাকা দেড় কেজি মধু নিয়েছি। আসল মধুর যে একটা স্বাদ আছে সেটা সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধুতে পেলাম এবং মৌয়ালদের সরিষার হলুদ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ পদ্ধতিটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।


ঘোড়াঘাট থানার মোটরসাইকেল আরোহী সাইদুল ইসলাম জানান, আমি ব্যক্তিগত কাজে ঘোড়াঘাট থেকে মোটরসাইকেল যোগে হিলি শহরে যাচ্ছিলাম হাঠাৎ রাস্তার পাশে সরিষার হলুদ ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা। দেখতে পেয়ে নেমে আসলাম। তাদের মধু সংগ্রহ বিষয়টি নিজ চোখে দেখলাম। মধু খেয়ে দেখলাম আসলেই অরিজিনাল মধুর যে স্বাদ তা এই মধুতে আছে, তাই ৪০০ টাকা দিয়ে এক কেজি কিনে নিলাম।


হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ আরজেনা বেগম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে। চাষিরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এবারে ১টি পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নে ২৬'শ ৪২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মীরা সরিষা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।


তিনি আরও বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ গুণ বেড়ে যায়। এতে সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহও একটা লাভ জনক ব্যবসা। এরফলে একদিকে মৌচাষিরা মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে যেমন লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে সরিয়া ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।


বিবার্তা/রব্বানী/জেএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com