দিগন্ত জোড়া মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন হিলির কৃষকরা
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫৬
দিগন্ত জোড়া মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন হিলির কৃষকরা
হিলি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত দেশের উত্তরের জনপদ দিনাজপুর জেলা। দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর হিলি উপজেলার দিগন্ত জোড়া মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। পৌষের শেষে মাঘের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত মাঠ। স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তায় বাম্পার ফলনের হাত ছানিতে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে এখানকার কৃষকরা।


স্থানীয় উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি রবি মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও তিনটি ইউনিয়নে ২,৬৪২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষকের শারীরিক পরিশ্রম ও নিবিড় পরিচর্যায়, বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে বেশি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার কৃষকরা। বাজারে সয়াবিন ও সরিষা তেলের দাম বৃদ্ধি ও গত বছর স্থানীয় বাজারে সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে।গত দুই বছরের তুলনায় এবার উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।


উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের কোকতাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আমন ধান কাটার পর তিন মাস জমি ফেলে না রেখে পরিশ্রম করে জমি তৈরি করে সরিষা বীজ বপন করা হয়েছে। বীজ লাগানোর ৬০ থেকে ৭০ দিনের মাথায় সরিষা ফসল ঘরে আসে।


১ বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ৬০০০ থেকে ৭০০০ টাকা। প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ মণ ফলন হয় সরিষার, যা বর্তমান বাজারে বিক্রি হবে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আবার সরিষা চাষের পূর্বে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে উন্নত জাতের সরিষা বীজ ও সার পেয়েছি।


হাকিমপুর হিলি পৌর সভার, ছাতনী গ্রামের সরিষা চাষি মাসুদ হাসান বলেন, আমন ধান কাটার পর জমি গুলো পড়ে থাকে তাই প্রতি বছর আমার জমিগুলোতে সরিষা চাষ করি। এবারও সরিষা চাষ করেছি। গাছ অনেক ভালো হয়েছে। আশা করছি ফলনও অনেক ভালো হবে।


তিনি আরও বলেন, জমিতে সরিষা চাষের সময় সার প্রয়োগ করলে বোরো রোপণের জন্য আলাদাভাবে তেমন সার দিতে হয় না। এটা আমাদের অনেক উপকারে আসে।


উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের বিশাপাড়া গ্রামের কৃষক আলম হোসেন বলেন, আমন কাটার পর সরিষা চাষ করলে আমাদের অনেক উপকার হয়। কারণ সরিষা কাটাই-মাড়াই করে সরিষা বিক্রয় করি এবং সরিষার অবশিষ্ট জ্বালানি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করতে পারি। আবার সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরো ধান লাগায়। এটা আমাদের একটা বোনাস ফসল।


এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, এটা স্বল্প খরচে একটি বোনাস ফসল যা প্রান্তিক কৃষকদের অনেক উপকারে আসে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের বিভিন্ন সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার পেয়েছি।


হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. আরজেনা বেগম জানান, হাকিমপুর উপজেলায় এবার সরিষার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২০২১ সালে এই উপজেলায় ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়। গত বছর ২০২৩ সালে উপজেলায় সরিষার চাষ হয়েছে ২,৪০০ হেক্টর জমিতে। এবারে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২,৬৪২ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। সরিষার চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ২ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে ডিএপি, পটাশ ২০ কেজি ও ১ কেজি করে বীজ বিতরণ করেছি। মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি আমরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারে রবি মৌসুমে উপজেলার সরিষা চাষিরা বাম্পার ফলন পাবে বলে আমরা আশাবাদী।


বিবার্তা/রব্বানী/জেএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com