
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় একই দিনে ও একই স্থানে জনসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে চিঠি প্রকাশ করেছে উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপ। এতে দীর্ঘদিনের গ্রুপিং এবার প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে। ফলে স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এরই মধ্যে আগামী ৩১ ডিসেম্বর উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের মরিয়ম বাজারে পাল্টাপাল্টি এ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন বিএনপির দু’টি গ্রুপ। পর্যায়ক্রমে আগামী ৩ জানুয়ারি খামারপাড়া ইউনিয়নের বোর্ডেরহাট, ৬ জানুয়ারি ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া বাজার, ৮ জানুয়ারি ভাবকী ইউনিয়নের কাচিনীয়া বাজার, ১০ জানুয়ারি গোয়ালডিহি ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর ও সর্বশেষ ১৪ জানুয়ারি আংগারপাড়া ইউনিয়নের পাকেরহাট গ্রোয়ার্স মার্কেটে সমাবেশের করার ঘোষণা দিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে প্রচার করছেন দুই গ্রুপ।
বর্তমানে প্রকাশ্যে দুই ভাগে বিভক্ত খানসামা উপজেলা বিএনপির একটি অংশ কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়ার অনুসারী এবং আরেকটি অংশ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও শিল্পপতি হাফিজুর রহমান সরকারের অনুসারী বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মী জানায়, গত ২৩ ডিসেম্বর খানসামা উপজেলার তৃনমূল পর্যায়ে বিএনপি'র সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করার লক্ষ্যে ৬ ইউনিয়নে জনসমাবেশের ঘোষণা দিয়ে ভেন্যু ও সময়সূচি উল্লেখ করে চিঠি স্বাক্ষর করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক চৌধুরী বিএসসি।
এই জনসমাবেশে অতিথি হিসেবে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়ার উপস্থিত থাকবে বলে জানতে পেরে পাকেরহাটে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সামনে ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় অবস্থান করে জনসমাবেশ স্থগিত করার দাবি জানিয়ে স্লোগান ও বিক্ষোভ করেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও শিল্পপতি হাফিজুর রহমান সরকারের অনুসারীরা। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে কর্মসূচি স্থগিত করে চিঠি স্বাক্ষর করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক চৌধুরী। তবে হাফিজ গ্রুপের অনুসারীদের অভিযোগ উপজেলা বিএনপির কোন সভা না করেই আহ্বায়ক একক সিদ্ধান্তে একটি পক্ষকে খুশি করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই আমরা স্থগিতের দাবি জানিয়েছি এখানে অতিথি বিষয় নয়।
এদিকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এই কর্মসূচি স্থগিত করলেও ৬ ইউনিয়ন বিএনপি জনসমাবেশ সফল করতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করছে বলে জানা যায়। এদের অধিকাংশ সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়া গ্রুপের অনুসারী বলে জানা গেছে। এই ইউনিয়ন কমিটি নিয়েও দুই গ্রুপের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এরই মাঝে ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শিল্পপতি হাফিজের অনুসারী ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ শাহ স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে ৬ ইউনিয়নে অপর গ্রুপের ঘোষিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত একই স্থানে ও একই দিনে জনসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। এরপর থেকেই দু-পক্ষের জনসমাবেশ ঘিরে উপজেলা জুড়ে চলছে উত্তেজনা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুই গ্রুপ তাদের নিজস্ব বিজ্ঞপ্তি ব্যবহার করে জনসমাবেশের প্রচার-প্রচারণা করছে। একই স্থানে একই দিনে সমাবেশ ঘিরে ইতিমধ্যেই ফেসবুক ও স্থানীয়দের মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে।
শিল্পপতি হাফিজের অনুসারী ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল ওয়াহেদ শাহ বলেন, মঞ্চ তৈরিসহ সার্বিক বিষয়ে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ঘোষিত সময় ও স্থানে ইনশাআল্লাহ ৬ ইউনিয়নে বিএনপির জনসমাবেশ সফল হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান মিয়ার অনুসারী ও জেলা বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক রবিউল আলম তুহিন বলেন, আওয়ামী দু:শাসন এর বিরুদ্ধে আমরাই মাঠে ছিলাম। তাই আমরা পূর্ব নির্ধারিত স্থান ও সময় অনুযায়ী ৬ ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে জনসমাবেশে করব। তবে কেউ বাধা দিতে আসলে রাজনৈতিক ভাবেই সেটা মোকাবেলা করা হবে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক চৌধুরী বিএসসি বলেন, উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে যে প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হয়েছিল সেটা স্থগিত করা হয়েছে। উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এখন কোন প্রোগ্রাম নাই। আমাকে না জানিয়ে দুই গ্রুপ একই ভেন্যুতে একই দিনে প্রোগ্রাম করার ঘোষণা দিয়েছে এটা মোটেও কাম্য নয়। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কেউ দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকমান্ডকে অবহিত করা হবে।
বিবার্তা/জামান/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]