
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। বৃহস্পতিবারও (২২ আগস্ট) বেড়েছে পানি। বুধবার রাতে উপজেলার খলাপাড়া এলাকায় বাঁধ ভাঙার ফলে পরিস্থিতির অবনতি হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। উদ্ধারের অপেক্ষায় আছে তারা। দুপুর নাগাদ মাত্র ১০০টির মতো পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে পেরেছে।
এদিকে উপজেলার আটটি স্থানে এলাকাভিত্তিক সড়ক ভেঙে গেছে। এতে এলাকায় যেমন পানি ঢুকছে, তেমনিভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
২২ আগস্ট, বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইটনা এলাকার তিনটি ও খলাপাড়া এলাকার দুটিসহ মোট আট স্থানে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। তিনি জানান, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। সেনাবাহিনীসহ অন্যান্যদের সহযোগিতায় বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল আলম জানান, হাওড়া নদী, জাজির খালসহ বিভিন্নস্থানে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে। এখন যে পানি আছে এর আরো ৩০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে বলে তিনি ধারণা দেন। এতে আরো নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেন।
ভারি বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ভারত সীমান্তবর্তী আখাউড়ার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হয় মঙ্গলবার রাত থেকে। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ ৩৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় সাড়ে ৫০০ পরিবার। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধানি জমি, শাকসবজির জমিসহ বিভিন্ন মাছের ঘের। বৃহস্পতিবার আরো নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। বন্ধ রয়েছে আখাউড়া-আগরতলা সড়ক যোগাযোগ। স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপার এখনো সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকে আখাউড়ায় ভারি বর্ষণ শুরু হয়। সকাল থেকে বন্দরের পাশ বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ৩৪টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী সেতু। বন্ধ হয়ে পড়ে বন্দরের বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপার। নতুন করে খলাপাড়া, ইটনা, রাজেন্দ্রপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়।
এর আগে মঙ্গলবার খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আসেন জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা দিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। তবে তারা আপাতত পানিবন্দি হয়ে পড়া লোকজনকে উদ্ধারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, পাহাড়ি ঢলে ১৯৫ হেক্টর শাকসবজির জমি, ১২২ হেক্টর আমনের বীজতলা, ৩৪৪০ হেক্টর রোপা আমন ধানের জমি পানিতে তলিয়ে আছে। দ্রুত পানি সরে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে। এক সপ্তাহ পর ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি জানান, বাঁধের অংশ ভেঙে যাওয়ায় প্লাবিত এলাকা বেড়ে যায়। এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সড়কের আটটি অংশ পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। দুর্গতদের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গতদের মাঝে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
বিবার্তা/নিয়ামুল/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]