লামায়
শ্রমিকলীগ নেতা সুজন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন : স্ত্রীসহ আটক ২
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ১৭:৫৯
শ্রমিকলীগ নেতা সুজন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন : স্ত্রীসহ আটক ২
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

অবশেষে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন হোসেন (২৮) হত্যার ঘটনায় জড়িতদের আটক করে রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে লামা থানা পুলিশ।


তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সোর্সের মাধ্যমে ঘটনার ৯ দিন পর বৃহস্পতিবার বিকেলে (১ আগস্ট) পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করতে সক্ষম হয়। নিহত সুজন হোসেন লামা পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত চুকু মিয়ার ছেলে।


আটকরা হলেন, নিহত সুজন হোসেনের স্ত্রী নুর বানু (২৮) ও জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দক্ষিণ ছালামী পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে হানিফ (৩০)।


আটকদের বরাত দিয়ে পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সুজন হোসেন ও নুর বানু পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। তাদের ১১ বছর বয়সী এক ছেলে ও ৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। সুজনের বাড়ি লামা পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়ায়। তিনি স্ত্রী সন্তান সহ সাবেক বিলছড়িস্থ শ্বশুরবাড়িতে ঘর জামাই হিসেবে থাকতেন। আগে সুজন হোসেন হোটেল কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন, গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ ধারাবাহিকতায় উপজেলা শ্রমিকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও নির্বাচিত হন সুজন হোসেন। পূর্বের পেশা ছেড়ে দেওয়ার কারণে সুজন হোসেনের সুনির্দিষ্ট কোন পেশা বা আয় ছিল না। স্ত্রী আর শাশুড়ির আয়ে সংসার চলতো। প্রায় সময় সুজন হোসেন স্ত্রীকে টাকার জন্য মারধর করতো। স্ত্রী কাজ করে এবং অনেক সময় ঋণ নিয়ে স্বামীর আবদারের যোগান দিত। টাকা দিতে না পারলে সুজন হোাসেন মারধরসহ ঘর ভাঙচুর করত। শুধু তাই নয়, সুজন হোসেন মুঠোফোনে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে কথা বলে সম্পর্ক গড়ত। এ নিয়ে সুজন হোসেন ও স্ত্রী নুর বানুর মধ্যে প্রায় সময় মনমালিন্য হতো। ঘটনার কয়েকদিন আগে টাকার জন্য সুজন হোসেন স্ত্রী নুর বানুকে মারধর করে এবং গলায় পাড়া দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। বার বার এ ধরণের ঘটনার কারণে স্ত্রী নুর বানু স্বামী সুজন হোসেনের উপর ক্ষুব্ধ হন।


গত তিন মাস আগে নিহত সুজন হোসেনের স্ত্রী নুর বানু ব্যক্তিগত কাজে পুরবী পরিবহনে করে বান্দরবান সদরে যাওয়ার সময় গাড়ির হেলফার হানিফের সাথে পরিচয় ও মুঠোফোন নম্বর বিনিময় হয়। এরপর থেকে উভয়ের মধ্যে কথাবার্তা হতো। স্বামীর সাথে মনমালিন্য এবং স্বামীর নির্যাতনের ঘটনা হানিফের সাথে শেয়ার করে নুর বানু। সুজন হোসেনকে প্রথমে এক বৈদ্যের মাধ্যমে বান মেরে হত্যর পরিকল্পনা করে তারা। এতে ব্যার্থ হয়ে নিজেরাই সুজন হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।ণ


পরিকল্পনা মোতাবেক ২০ জুলাই হানিফ চকরিয়া থেকে লামায় অবস্থান করে। কিন্তু ওই দিনগত রাতে খাবারের সাথে সুজন হোসেন কে ঘুমের ঔষধ খাওয়াতে না পারায় বাতিলও করে পরিকল্পনা। ২১ জুলাই ডাক্তার দেখানোর জন্য নুর বানু তার মা ও কন্যাকে নিয়ে লামা বাজারে যায়। পরদিন আবারও ডাক্তার দেখাতে হবে বলে কৌশলে দুই সন্তানকে সুজন হোসেনের নয়াপাড়াস্থ ভাইয়ের বাসায় রেখে যান। পরে এ দিনগত রাতে পূর্ব পরিকল্পনা মতে নুর বানু ভাতের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিলে স্বামী সুজন হোসেন দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুমিয়ে পড়ার বিষয়টি মুঠোফোনে নুর বানু জানালে রাত ১১টার দিকে হানিফ ঘরে প্রবেশ করে। এরপর নুর বানু গামছা দিয়ে ঘুমন্ত সুজন হোসেনের পা বেঁধে ফেলে। এ সময় হানিফ সুজনের গায়ের উপর উঠে কম্বল দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরেন। এর মধ্যে সুজন হোসেনে ঘুম থেকে উঠে ধস্তাধস্তি শুরু করলে পায়ের বাধন খুলে যায়। এ অবস্থায় সুজন হোসেনের নাকে মুখে ঘুষি মেরে গামছা দিয়ে গলা পেঁছিয়ে ধরে হানিফ এবং নুর বানু সুজনের গোপনাঙ্গে চেপে ধরে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সুজন হোসেন নিস্তেজ হয়ে গেলে রাত ২টার দিকে নিহতের লাশটি ঘাতক হানিফ ও নুর বানু কাঁধে করে পাশের ঝিরিতে ফেলে আসে। পানির স্রোতে ভেসে লাশটি মাতামুহুরী নদীতে চলে যায়। পুলিশ ২৩ জুলাই বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মাতামুহুরী নদীর মেরাখোলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে সুজন হোসেনের লাশ উদ্ধার করে। পরে এ ঘটনায় লামা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত সুজন হোসেনের ভাই মো. শরিফুল ইসলাম।
বিবার্তা/আরমান/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com