
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারমুখী আচরণ ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
১০ জুলাই, বুধবার হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-এর সামনেই অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু এরকম আচরণের সম্মুখীন হন। আন্দোলনকারীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ও অবরোধ করেছিল। সেসময় তিনি নিজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাজে আচরণের সম্মুখীন হলেও গণমাধ্যমে তাকেই দোষী করে খবরের শিরোনাম করা হয়েছে।
একটি গণমাধ্যমের ভিডিওতে এই শিরোনামে দেখানো হয়েছে যে, কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের জামাত শিবির বললেন এমপি আলাউদ্দিন নাসিম এর স্ত্রী। উল্লেখ্য, ডা. জাহানারা আরজু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার ও ফেনী-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সহধর্মিনী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ডা. জাহানারা আরজু অসুস্থ শাশুড়িকে দেখতে যাচ্ছিলেন। সেসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গাড়ি থামিয়ে তার নাম পরিচয় জানতে চায়। তিনি নিজের অফিসিয়াল কার্ড বের করে দিলে তার গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেসময় অন্য কেউ জানায় এটি এমপির স্ত্রীর গাড়ি। সেসময় শিক্ষার্থীরা তাকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে বলে এবং ক্যামেরা নিয়ে আসে। গণমাধ্যমের ক্যামেরা সামনে রেখে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কোটার পক্ষে না বিপক্ষে। সেসময় তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করতে হবে, অন্য কোটা থাকা উচিত কি না তা আলোচনা সাপেক্ষ। এরপর শিক্ষার্থীরা তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে।
এমন আচরণের প্রেক্ষিতে তিনি শিক্ষার্থীদের রেগে যাওয়ার কারণ জানতে চান। তিনি জানতে চান যারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়টি শুনেই তার উপর রেগে গেল তারা জামাত শিবির কিনা। আর এই কথাটিকেই ইস্যু বানিয়ে শিক্ষার্থীরা তাকে অপদস্থ করতে শুরু করে। শিক্ষার্থীরা জানতে চায়, তিনি পড়াশোনা করেছেন কি না। তারা এও দাবি করে যে, ডা. জাহানারা আরজু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জামাত শিবির বলেছে। অথচ তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনে শিক্ষার্থীরা রেগে যাওয়ায় এই প্রশ্ন করেছিলেন।
জানতে চাইলে ডা. জাহানারা আরজু বিবার্তাকে বলেন, আমি আমার শাশুড়িকে দেখতে দেবরের বাসায় যাচ্ছিলাম। ওরা আমার কার্ড দেখে প্রথমে গাড়ি যেতে দিল। পরে গাড়িতে স্টিকার দেখে চিৎকার শুরু করল এটা এমপির গাড়ি এমপির গাড়ি। তখন কিছুতেই আমাকে যেতে দেবে না। এরপর ওদের উদ্ধত আচরণ দেখে আমি কিছুটা ভীত হয়ে পড়ি এবং ওদের ছবি তুলি। ওরা বলে, কেন ছবি তুললেন ডিলিট করেন। ওদের কথা মতো আমি ছবিও ডিলিট করলাম কিন্তু ওরা আমাকে ছাড়বে না। বলে, কেন ছবি তুললেন। আমি বললাম ডিলিট তো করেছি। তারপরও ওরা আমার চিৎকার করতেই থাকল। তারা জিজ্ঞেস করল আমি কোটার পক্ষে নাকি বিপক্ষে। বললাম মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেখাতে হবে সবার। তারা রেগে গেল।
তিনি বিবার্তাকে আরো বলেন, আমি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেছি মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা থাকতেই হবে, অন্য কোটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতেই হবে। যেমন নারী কোটা, এখন অনেক নারীই কোটা চাচ্ছে না, এসব নিয়ে কথা হতে পারে। কিন্তু ওরা আমার কথায় এমন খেপে গেল।
গণমাধ্যমটির ভিডিওতেও দেখা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ডা. জাহানারা আরজুর সাথে উচ্চস্বরে এবং অত্যন্ত বাজেভাবে কথা বলছিল। মূলত গণমাধ্যমটি ঘটনার আংশিক ভিডিও ধারণ করে তা সম্প্রচার করেছে।
এছাড়াও, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জিক্যাল অনকোলজির সহযোগী অধ্যাপক কৃষ্ণা রূপা মজুমদার তার ফেসবুকে লিখেছেন, যা আচরণ করা হলো আমার ড্রাইভার আর সহযোগীর সাথে তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়া কিছুই না। আমার হাসপাতালের ৫০০ গজ রাস্তার মধ্যেও আমাকে প্রমাণ দিতে হবে আমি ডাক্তার কি না, অথচ গাড়িতে BSMMU sticker, ID card... তাও গাড়ি আটকিয়ে ৩০০/৪০০ জন মিলে গাড়িতে ধাক্কাধাক্কি, আমার ড্রাইভার আর এসিসট্যান্ট-কে গাড়ি থেকে থেকে টেনে রাস্তায় বের করে নিলো..., ওকে ধরে মারছে। আমি অনুরোধ করলাম প্লিজ ওর গায়ে হাত তুলবেন না... প্লিজ। গাড়ি পুড়িয়ে দিবে, ভেঙে দেবে, হুমকির পর হুমকি। এত কোন বর্বরতা? আর এত চিৎকার, চারিদিকে ক্যামেরা ভর্তি... মনে হচ্ছে কতবড় অন্যায় করে ফেলেছি হাসপাতালে গিয়ে। চিকিৎসক হিসেবে কোনো মূল্য নাই। শুধু বলতে থাকছিলাম... মাথা ঠান্ডা করেন... চিকিৎসকের গাড়ি আটকিয়ে এভাবে আন্দোলন হয় না।
উল্লেখ্য, বুধবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনের কারণে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ থাকায় তীব্র গরমে হেঁটেই গন্তব্যে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী-শিশুসহ গুলিস্তান ও আশপাশে আসা ব্যবসায়ীরা। এ সময় মালামাল মাথায় করে হেঁটে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে তাদের।
বিবার্তা/এসবি/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]