মোংলা বন্দরের কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবৈধ পদোন্নতিসহ দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২:৪৫
মোংলা বন্দরের কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবৈধ পদোন্নতিসহ দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ
মোংলা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখার উচ্চমান সহকারী মো. আবু তাহেরের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া বিভিন্ন অভিযোগে জানা গেছে, মো. আবু তাহের চাকরির প্রথমাবস্থায় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগে যোগদান করেন। এ বিভাগে চাকরিকালীন সময়ে তিনি লোহার পাইপ চুরির ঘটনায় জড়িত থাকায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট বিভাগীয় শাস্তিপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে তিনি তথ্য গোপন করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিরাপত্তা থেকে জুনিয়র আউটডোর পদে রহস্যজনকভাবে পদোন্নতি নেন। এরপর আবু তাহের ২০২২ সালের দিকে প্রভাব বিস্তার করে কৌশলে কতিপয় সিবিএ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তুষ্ট করে জুনিয়র আউটডোর পদ থেকে উচ্চমান সহকারী পদে পুনরায় পদোন্নতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখায় যোগদান করেন।


এদিকে আবু তাহেরের এ পদোন্নতিকে ঘিরে নানা অভিযোগ ও প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি চাকরি বিধির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর উপর বিভাগীয় কোন দণ্ড আরোপ করা হলে তিনি তার দণ্ড ভোগের মেয়াদ শেষে লঘু দণ্ডের ক্ষেত্রে ১ বছর ও গুরু দণ্ডের ক্ষেত্রে ২ বছর পদোন্নতির জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। আবু তাহেরের দণ্ড ভোগের মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত। রহস্যের বিষয় হচ্ছে দণ্ড ভোগের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আবু তাহেরকে নিরাপত্তা প্রহরী থেকে জুনিয়র আউটডোর পদে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি পদোন্নতি দেয়া হয়। যে পদোন্নতি নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন ও রহস্য দেখা দিয়েছে।


অপরদিকে অভিযুক্ত মো. আবু তাহের কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখায় উচ্চমান সহকারী হিসেবে যোগদান করেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতাদের দোহাই দিয়ে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়েছেন। অভিযোগে জানা গেছে, তিনি দাফতরিক অনুমতি ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের জমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর, বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকান ও বসবাসের ঘর বাবদ নিয়মিত মাসিক মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে থাকেন। বন্দর ভবনের পূর্ব পাশের রেললাইন সংলগ্ন অবৈধ স্থাপনা এর আগে উচ্ছেদ করা হলেও তিনি সম্পত্তি শাখার লোক পরিচয় দিয়ে পুনরায় সেখানে অবৈধ স্থাপনা তৈরির সুযোগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। বন্দরের সাইফ পোর্ট এর বিপরীত স্থানে কর্তৃপক্ষের আম বাগান থেকে চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ আমসহ কাঁঠাল ও ডাব তিনি কালো বাজারে অহরহ বিক্রি করে অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হচ্ছেন। বন্দরের বিদ্যুতের লাইন সংলগ্ন গাছের ছোট ডালপালা কাঁটার নামে তিনি তার লোকদের দিয়ে বড় বড় ডাল কাটিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বন্দরের ৭টি ডাইক থেকে লোক দিয়ে বিপুল পরিমাণ বালু তিনি নিলেও কর্তৃপক্ষের তহবিলে জমা দিয়েছে সামান্য পরিমাণ বালুর টাকা। বালু বাণিজ্য করে তিনি লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। এছাড়া আবু তাহের বন্দর ভবনের আশপাশ, ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকা, পাওয়ার হাউজ এলাকা, পিকনিক কর্নারসহ বিভিন্ন এলাকায় জায়গা, স্থাপনা, পুকুর বরাদ্দ দিবে বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করে চলেছে।


ইতিপূর্বে আবু তাহেরের এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন জন অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে এসবের কোন প্রতিকার হয়নি বলে বন্দর চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করা বিভিন্ন অভিযোগে বলা হয়েছে।


এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আবু তাহের বিবার্তাকে বলেন, এসব অফিসিয়াল বিষয়, এ কারণে কোন মন্তব্য করবো না।


অপরদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মো. নুরুজ্জামান সম্পত্তি শাখার উচ্চমান সহকারী মো. আবু তাহেরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বিবার্তাকে বলেন, এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গঠিত কমিটির তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে আবু তাহেরের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/জাহিদ/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com