
সারা দেশেই এখন আতঙ্কের এক নাম রাসেলস ভাইপার (বাংলাদেশে পরিচিত চন্দ্রবোড়া) সাপ। এ আতঙ্কের মাঝেই এবার পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলল তীব্র বিষধর সাপ ‘ইয়েলো বেলিড সি’ সাপের। গবেষকরা বলছেন, বিশ্বের স্থল ও সমুদ্রভাগের সব সাপের মধ্যে এটি অন্যতম বিষধর।
২০ জুন, বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈকতের ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মাসুম বিল্লাহ সাপটি দেখতে পেয়ে স্থানীয় পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনিমেল লাভার্স অব পটুয়াখালীর সদস্যদের জানান।
এনিমেল লাভার্স অব পটুয়াখালীর সদস্য কেএম বাচ্চু বলেন, দুপুরে ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিরল প্রজাতির জীবিত সাপটি উদ্ধার করা হয়েছে। সাপটির পেটের রঙ হলুদ, আর দেহের উপরিভাগ কালো। কালো দেহে হলুদের ছোঁয়া থাকায় এ সাপ দেখতে অদ্ভূত লাগে।
তিনি আরো বলেন, সাপটি উদ্ধার করে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে যাতে পর্যটকরা সৈকতে বিচরণকালে কোনো বিপদের সম্মুখীন না হন। পরে বন বিভাগ ও সংগঠনের সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে অবমুক্ত কিংবা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, এই সাপগুলো সমুদ্রে বাস করে। গত দুই বছর ধরে সমুদ্রসৈকতে এই সাপের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। আর সৈকতের কোথাও এ সাপের দেখা মিললে ছবি তোলার জন্য কাছে না গিয়ে কিংবা স্পর্শ না করে দ্রুত বন বিভাগকে জানানোর অনুরোধ জানান তিনি।
অ্যানিমেল লাভার্স অব পটুয়াখালীর কলাপাড়া টিমের সদস্য কে এম বাচ্চু বলেন, কুয়াকাটা বিচের পূর্ব পাশে ঝাউবনের সামনে ‘ইয়েলো-বেলাইড সি স্নেক’ দেখতে পান ট্যুর গাইড মাসুম বিল্লাহ। আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ওখানে চলে আসি। কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সাপটি সরিয়ে ফেলা হয়।
তবে এটিই প্রথম নয়, এর আগে ২০২২ সালে দুটি ও ২০২৩ সালে একটি এই সাপের দেখা মিলেছিল। এছাড়া কুয়াকাটা সৈকতের কাছাকাছি বিরল প্রজাতির সাপ, তিমি, কচ্ছপের দেখা মিলছে।
বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ সাপের পেটের রং হলুদ। দেহের উপরিভাগ কালো। এরা সমুদ্রে থাকে। এ সাপের ইংরেজি নাম ‘ইয়েলো বেলাইড সি স্নেক’। এরা হাইড্রোফিদা পরিবারভুক্ত।
তিনি আরো বলেন, গভীর সমুদ্রে বসবাস করা এ সাপ তীরবর্তী এলাকায় খুব কম দেখা মেলে। তবে এটি অত্যন্ত বিষধর সাপ। যদি কাউকে আঘাত করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হতে পারে। হাসপাতাল পর্যন্ত নেওয়ারও সময় দেয় না। এদের অ্যান্টিবায়োটিক এখনো বাংলাদেশে তৈরি হয়নি।
উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, সমুদ্র থেকে আসা একটি বিষাক্ত প্রজাতির সাপ ‘ইয়েলো-বেলাইড সি স্নেক’, যা আটলান্টিক মহাসাগর ছাড়া গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মহাসাগরীয় পানিতে পাওয়া যায়।
সমুদ্রের নীল অর্থনীতি, উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, বিশ্বের স্থল ও সমুদ্রভাগের সব সাপের মধ্যে এটি অন্যতম বিষধর। এই সাপ সচরাচর দেখা যায় না। গত বছরের জুনে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ও কুয়াকাটা সৈকতে দেখা গেছে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]