চকরিয়ার ভিআইপি চোর তৌহিদ বিমানবন্দরে গ্রেফতার
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪, ১৩:৪৩
চকরিয়ার ভিআইপি চোর তৌহিদ বিমানবন্দরে গ্রেফতার
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশ পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ও গরু চুরির ঘটনার মূলহোতা তৌহিদ (৩১) কে দুবাই পালিয়ে যাবার সময় হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


সোমবার (২৭ মে) বিকেলে তাকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ইমিগ্রেশন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ন্ত্রণে নেন।


বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ইন্সপেক্টর মো. দিদারুল ফেরদৌস। গ্রেফতার তৌহিদ কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা ইউনিয়নের কারিয়াঘো গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে।


জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারিতে সংঘটিত বোয়ালখালীর শাকপুরা এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে প্রজ্ঞাবংশ বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের বৌদ্ধ বিহারের মূর্তিতে থাকা স্বর্ণের চেইন ও রকেট চুরির ঘটনায় করা ক্লু-লেস মামলায় এই ভিআইপি চোরকে পিবিআই পুলিশ গ্রেফতার করেন।


ওদিকে, বোয়ালখালীর ওই বৌদ্ধ বিহারে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় ৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা (নং-০৬) করেছিলেন প্রজ্ঞাবংশ বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শীল প্রিয় ভিক্ষু (৩৬)।


মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি রাত ১টা ৪৫ মিনিটের সময় বোয়ালখালীর শাকপুরা ইউনিয়নের মধ্যম শাকপুরা গ্রামের বড়ুয়ার টেক এলাকার বৌদ্ধ বিহারে অজ্ঞাতনামা চার দুষ্কৃতকারী প্রবেশ করেন।


প্রবেশ করেই বৌদ্ধ বিহারের সেবক অংসাই সিং মারমা (১৭) এর রুমের তালা ভেঙে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখান। পরে তাকে জিম্মি করে মন্দিরের অধ্যক্ষের রুমে প্রবেশ করেন। তারপর তাৎক্ষণিক অধ্যক্ষের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন।


এমন কি তারা নিজেদের প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে সবাইকে এক রুমে বেঁধে ফেলেন। পরে স্টিলের আলমারির তালা খুলতে বাধ্য করেন। দুষ্কৃতিকারীরা আলমারির তালা ভেঙে নগদ টাকা, বৌদ্ধ বিহারে মূর্তিতে রাখা স্বর্ণের চেইন, রকেট, টিপ, আইপিএস ও দান বাক্সের টাকা লুট করে নিয়ে যান।


পরে বোয়ালখালী থানা পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও ক্লুলেস এ মামলার কোন রহস্য উদ্‌ঘাটন বা কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় মামলাটি জেলা পিবিআই পুলিশের কাছে চলে যায়।


পরে পিবিআই পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান ইন্সপেক্টর মো. দিদারুল ফেরদৌসকে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করেন। ওসি ফেরদৌস দীর্ঘ ৪ মাস তথ্য উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে গোপন সংবাদের মাধ্যমে বিদেশে পালিয়ে যাবার সময় তৌহিদকে গ্রেফতার করেন।


জানা যায়, এর আগেও গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর রাতে বোয়ালখালীর পশ্চিম শাকপুরার গ্রামের শাহ আমানত ভবনে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।


এ সময় ভবনের ৮টি ফ্ল্যাট থেকে ১৩ টি মোবাইল, ৭ ভরি স্বর্ণ, নগদ টাকা ও জামা কাপড় লুট করে ডাকাত দল। যে ঘটনায় এখনো কোনো মামলা করেনি তখন ভবন মালিক মো. সাবের (৫২)।


এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়নের দুধ ব্যাপারী মো. নাজেমের একতলা বাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে ডাকাতেরা পরিবারের সবাইকে হাত পা বেঁধে এক রুমে আটকে রেখে প্রায় ৩ ভরি স্বর্ণ, দুই লক্ষ নগদ টাকা, দুটি মোবাইল ফোনসহ কাপড় লুট করে নিয়ে যান। থানা পুলিশ এ মামলারও কোন কুল কিনারা করতে না পারায় ডিবির কাছে চলে যায়।


পুলিশ জানায়, গ্রেফতার তৌহিদ চকরিয়ার গরু চোর নইব্যা চোরের অন্যতম সদস্য। নইব্যা চোরের মতো তৌহিদ নিজেও চকরিয়ায় বিলাসবহুল বাড়ি করেছেন। যার পেশা গরু চুরি আর ডাকাতি করা। এ ছাড়া দৃশ্যমান তাদের কোনো ব্যবসা নেই।


আরো তথ্য মিলে, চট্টগ্রামের দক্ষিণে সাতকানিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, কর্ণফুলী ও বোয়ালখালী এলাকাতে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত অন্তত ১০টি পুলিশ সেঁজে ডাকাতি ও গরু চুরির ঘটনা ঘটে। সে সব ঘটনার মূলহোতা এই ভিআইপি চোর তৌহিদ। কিন্তু অনেক ঘটনার কোন মামলায় হয়নি।


জানা যায়, এই চক্রের সদস্যরা গ্রাম ছাড়িয়ে শহরেও মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও সিট বিহীন নোহা গাড়ি নিয়ে চুরি ও ডাকাতি করতেন। কোনো ঘটনায় বাধা পেলে প্রকাশ্যে ফাঁকা গুলি চালাতেন।


এদের রয়েছে ২০-২৫ জনের গ্যাং। গরু চুরি আর ডাকাতি করেই এরা কোটিপতি সকলেই। বেশির ভাগ গ্যাংয়ের ডাকাত চকরিয়া এলাকার। পুরো চকরিয়ায় এদের বলয়।


পুলিশের অনুসন্ধানে আরো তথ্য মিলে, চকরিয়ার কোনাখালীর বাসিন্দা নোমানের নেতৃত্বে একটি ‘ভিআইপি’ চোর চক্র সক্রিয়। এই গ্রুপের ৪০ সদস্যের ব্যাপারে তথ্য মেলে।


২০১৭ সাল থেকে এই গ্রুপ সক্রিয়। এক সময় তাদের দলনেতা ছিলেন রিদওয়ান। একাধিক মামলায় কারাভোগের পর তিনি এই পথ ছাড়েন। এরপর দলনেতা হিসেবে রিদওয়ানের পদটি নেন নোমান।


চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, ‘প্রশাসনের লোক পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি ও চুরির ঘটনায় মামলার সূত্র ধরে পিবিআই পুলিশ কাজ করছেন। শিগগিরই চক্রের অন্য সদস্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com