
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে থেমে থেমে মর্টারশেল ও গ্রেনেড-গুলির বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে।
সোমবার (২৪ মার্চ) রাত থেকে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) বিকাল পর্যন্ত টেকনাফ পৌরসভা, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তের এপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ও ধোঁয়ার কুণ্ডলি উড়তে দেখা গেছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলার সীমান্তবর্তী সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন।
এর আগে সীমান্তের ওপার থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ শুনতে পান হোয়াইক্যং, হ্নীলা ওশাহপরীর দ্বীপ এলাকার বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার মিয়ানমার থেকে সবচেয়ে বেশি গুলির শব্দ ভেসে আসে টেকনাফ সীমান্তের দক্ষিণ প্রান্তে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইনের অধিকাংশ অঞ্চল এবং বিজিপির ক্যাম্প ও চৌকি পুনরুদ্ধার করতে দেশটির সেনাবাহিনীর আবারও হামলা শুরু করেছে। রাখাইনের আকিয়াব, মংডু শহরের বলি বাজারে আশপাশে দেশটির সেনা ক্যাম্পগুলো আরাকান আর্মি দখল নিতে হামলা চালাচ্ছে। অপরদিকে, দেশটির সেনাবাহিনীর সেগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাল্টা আক্রমণ করছেন। হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে মর্টারশেল ও ভারি গুলি। এতে ওপার থেকে টেকনাফ সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ।
টেকনাফ পৌরসভার বাসিন্দা রহমত উল্লাহ বলেন, রাতভর মর্টারশেল ও গুলির শব্দে ঘুম আসেনি। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে দফায় দফায় ভেসে আসা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে বাড়ি-ঘর কেঁপে উঠে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে এপারের সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। রোহিঙ্গা আসার পর থেকে নাফ নদী বন্ধ থাকলেও সীমান্তের বেড়িবাঁধের কাছে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বহু মানুষের চিংড়ি ও কাঁকড়া ঘেরসহ চাষাবাদের জমি রয়েছে। সেখানে তারা যেতে ভয় পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সারাদিন ওপার থেকে থেমে থেমে এপারে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। তবে আগের মতো টেকনাফ সীমান্তের এপারের কোথাও গোলা বা মর্টারশেল পড়েনি বলে জানা গেছে।
সাবরাং ইউপির ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য ফারিহা ইয়াসমিন বলেন, সাহরির পর থেকে মিয়ানমারের গুলির আওয়াজে ঘুমাতে পারিনি। সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। সকাল ৮টা পর্যন্ত শব্দ শুনতে পেয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, সাহরির সময় থেকে মিয়ানমার অভ্যন্তরে গুলি ও মর্টার শেলের আওয়াজ শুনতে পান ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মানুষরা। বিকট শব্দে ঘুমাতে পারেননি কেউ। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের কারণে মানুষ যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন।
এদিকে মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সীমান্তে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
বিজিবি-২ (টেকনাফ) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীসহ সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, রাখাইন রাজ্যে বিস্ফোরণে ঘটনা ঘটলেও টেকনাফ সীমান্তের গ্রামগুলোতে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]