আলীকদমে ১৪ বছরেও শেষ হয়নি পানিশোধনাগার প্রকল্পের কাজ
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৫:২২
আলীকদমে ১৪ বছরেও শেষ হয়নি পানিশোধনাগার প্রকল্পের কাজ
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

এ যেন এক লাগামহীন ঘোড়ার গল্প, সময়ের পর সময় শেষ হলেও কাজের কোনো সমাপ্তি নেই। লাগামহীন ঘোড়ার এই গল্পটি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার পানি শোধনাগার প্রকল্পের। সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে দাবি করে পানির সংযোগ নেওয়ার জন্য গ্রাহকদের আহ্বান জানালেও এখন পানির সংযোগ নিতে তেমন সাড়া মিলছে না গ্রাহকদের। ফলে সরকারের সাড়ে ১১ কোটি টাকা জলে যাবে বলে মনে করছে সচেতন মহল।


সূত্র জানায়, আলীকদম উপজেলা পরিষদের পাশে ছাবের মিয়া পাড়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে ২০১১ সালের ১১ জুন প্রকল্পটির কাজ শুরু করে। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ বছর পার হলেও প্রকল্পের নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি এখনো। গত বছর এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হলেও ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পানি দেখেনি স্থানীয়রা।


উদ্বোধনের দিন কয়েক ঘণ্টা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পানি দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় পানি সরবরাহ। চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি পানি শোধনাগার প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।


খোঁজ নিয়ে যায়, ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি জলাধার নির্মাণের পর প্রকল্পের কাজ পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। পরে পুনঃ নির্মাণের জন্য ২০২০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশন থেকে আরও ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ নির্মাণকাজ ২০২২ সালের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু গত বছরের ১২ এপ্রিল উদ্বোধনের দিনই পানি সরবরাহ দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। প্রকল্পের শুরু থেকে দুই দফায় এ পর্যন্ত সাড়ে ১১ কোটি টাকা ব্যয় হলেও পানি পায়নি আলীকদম বাসী।


উপজেলা সদর ইউনিয়নের সাবের মিয়াপাড়ায় পাড়ার বাসিন্দা নুরুল হক জানান, শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানি সংকটের দেখা দেয়। বিগত বছরগুলোতে এক কলসি পানির জন্য নলকূপের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছিল। তারপরও পানি সংকট নিরসনে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই।


জানা গেছে, গত ৩ মাস আগে পানির সংযোগ লাইন প্রদানের জন্য মাইকিং করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতি লাইনের জন্য ফি নির্ধারণ হয় ১০ হাজার টাকা। নিয়মিত পানি সরবরাহ নিশ্চিত হবে কিনা এমন সংশয় থাকায় পানি শোধনাগার থেকে পানি সংগ্রহে স্থানীয়দের আগ্রহ কম, ফলে আবেদন করেনি কেউ। পরে দ্বিতীয় দফায় পাঁচ হাজার, তৃতীয় দফায় দুই হাজার সংযোগ ফি নির্ধারণ করা হলে সংযোগের জন্য আবেদন জমা দেয় ৫০ জন গ্রাহক। তবে এসব গ্রাহককে এখনও পানি সরবরাহ করতে পারেনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।


উপজেলা সদরের বাসিন্দা মংহ্লা প্রু তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পানির কষ্ট আমাদের চিরকালেই যেন থেকে যাবে, ১৪ বছরেও পানি সংকট নিরসন হয়নি, সামনে শোধনাগার থেকে নিয়মিত পানি পাবো এর নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। ফলে সরকারের সাড়ে ১১ কোটি টাকা জলে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকেরা বলেন, হাসপাতালে বছরের পর বছর ধরে পানির সংকট চলছে। অথচ উদ্বোধন শেষে কয়েক ঘণ্টা পানি সরবরাহ দেওয়ার পর পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবাই হতাশ।


তবে জন স্বাস্থ্যের আলীকদম উপজেলার প্রকৌশলী মোহাম্মদ হালিম জানায়, পানি শোধনাগারের কাজটি শেষ হয়েছে, পানির সংযোগ নিতে স্থানীয়দের আগ্রহ কম।


এই বিষয়ে নিয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউল গনি ওসমানী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পানি প্রকল্পের কাজটি প্রায় সমাপ্ত হয়েছে। আগে মাইকিং করা হয়েছিল কিন্তু গ্রাহক না থাকায় পানি দেওয়া হয়নি। বর্তমানে পানির লাইনের খরচও কমানো হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।


বিবার্তা/আরমান/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com