এবার রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪, ২২:৩৫
এবার রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

এবার আরাকান আর্মির সদস্যরাও মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মতো রোহিঙ্গাদের নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) নির্যাতন বন্ধ করতে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বুচিডং শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা।


একই সঙ্গে মিয়ানমারের অন্তত তিন লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


সূত্র অনুযায়ী, মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের শুরুতে আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) যুক্ত থাকলেও সম্প্রতি বিপক্ষে গেছে। আরএসও সদস্যরা এখন উল্টো মিয়ানমারের সামরিক জান্তার হয়ে কাজ করছে। ফলে রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মি নির্যাতন শুরু করেছে বলে তথ্য আসছে।


মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা, সীমান্ত বাণিজ্যে জড়িত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, মিয়ানমার থেকে পাঠানো ছবি-ভিডিও এবং বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।


তারা বলছেন, মিয়ানমারের মংডু শহর ঘিরে বর্তমানে কমপক্ষে তিন লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। সেখানের সিকদারপাড়া, দলিয়াপাড়া, কদিরবিল, নুরুল্যাহপাড়া, বাগগুনা, থানাশো, সোজাপাড়াসহ আরও কয়েকটি গ্রামে এসব রোহিঙ্গার বসবাস। এসব রোহিঙ্গা মংডু শহর ও তার আশপাশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, মৎস্যঘের ও কৃষি খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্যাতন-নিপীড়নে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। সে সময়ও এসব গ্রাম থেকে রোহিঙ্গারা ঘর ছেড়ে আসেনি। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এসেছিল অন্য এলাকা থেকে।


মংডুর সোজাপাড়ার রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, ২০ দিন ধরে পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে উঠেছে। আরাকান আর্মির যোদ্ধারা রাখাইন রাজ্যের ৯৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এখন মংডু শহরের কিছু অংশ, বুচিডং শহরের কিছু অংশ, সিত্তওয়ে (আকিয়াব) মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জান্তার প্রতিনিধিরা কয়েক দফায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তারা রোহিঙ্গাদের সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। বৈঠকের খবর জানার পর আরাকান আর্মির সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ওপর ক্ষুব্দ হয়েছে মন্তব্য করে আনোয়ার বলেছেন, আরাকান আর্মি এখন মিয়ানমারের জান্তার ভূমিকা নিয়েছে। ২০১৭ সালের জান্তার মতো আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন চালাচ্ছে।


আনোয়ার অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গা নারীদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করছে এবং রোহিঙ্গা পুরুষদের মারধর করছে আরাকান আর্মির সদস্যরা।


সিকদারপাড়ার মোহাম্মদ সেলিম নামে অপর এক রোহিঙ্গা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি খুব খারাপ। জান্তার পক্ষে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নমনীয় আচরণ করা হলেও আরাকান আর্মি উল্টো করছে। ফলে মংডু শহরের আশপাশের রোহিঙ্গারা পালানোর চেষ্টায় আছে। নাফ নদের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মৎস্যঘের, প্যারাবনের আশপাশে অনেক রোহিঙ্গা এখন আশ্রয় নিয়েছে। তারা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করছে।


এ পরিস্থিতিতে নির্যাতন বন্ধ ও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। মঙ্গলবার দুপুরে বুচিডং শহরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা এই আহ্বান জানায়। ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, স্লোগান দিচ্ছে এবং প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করছে।


বুচিডং শহরে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক একটি সংস্থায় কর্মরত একজন রাখাইন তরুণ হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বলেছেন, বিক্ষোভের সময় রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেছেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করছে এবং পুরুষদের মারধর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বিক্ষোভের পর আরাকান আর্মি আরও ক্ষুব্ধ হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।


এমন পরিস্থিতিতে আবারও প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় সীমান্তে জড়ো হচ্ছে বলে বাংলাদেশের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।


গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আরাকান আর্মি এখন রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এর জেরে মঙ্গলবার ভোরে টেকনাফের হ্নীলা সীমান্তে নাফ নদের ওপারের লালদ্বীপ এলাকায় আরএসও সদস্যরা হামলা চালিয়েছে। সেখানে আরাকান আর্মির সঙ্গে আরএসওর ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধ হয়। বর্তমানে লালদ্বীপ আরএসওর দখলে রয়েছে বলে জানা গেছে।


রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত কঠোর নজরদারিতে আছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com