
কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড় থেকে আবারও ‘মুক্তিপণের দাবিতে’ পাঁচ কৃষককে অপহরণ করা হয়েছে।
২১ মার্চ, বৃহস্পতিবার ভোরে টেকনাফের হ্নীলার পানখালী পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। অপহৃতদের মুক্তির জন্য পরিবারের কাছে ত্রিশ লাখ টাকা দাবি করেছে অস্ত্রধারীরা।
অপহৃতরা হলেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী এলাকার মোহাম্মদ শাহজাহানের ছেলে মো. জিহান (১৩), একই এলাকার ফকির আহম্মদের ছেলে মো. রফিক (২২), আব্দুর রহিমের ছেলে মোহাম্মদ নুর (১৮), মৃত মো. ছৈয়দ উল্লাহর ছেলে মো. শাওন (১৫) ও নুরুল আমিনের ছেলে আব্দুর রহমান (১৫)।
এ বিষয়ে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, অপহরণের খবরটি শুনে এলাকায় এসেছি। অপহৃতদের উদ্ধারের বিষয়ে আমরা সবাই মিলে কাজ করছি।
অপহৃতদের স্বজনদের বরাতে রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, বুধবার রাতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী পাহাড়ী এলাকা সংলগ্ন ফসলি খেত পাহারা দিচ্ছিল কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার ভোররাতের দিকে গহীন পাহাড়ের দিক মুখোশধারী একদল দুর্বৃত্ত অস্ত্রের মুখে ৫ জনকে তুলে নিয়ে যায়। পরে স্বজনরা বিষয়টি অন্যদের জানান।
অপহৃত রফিকের বড় ভাই মো. শফিক বলেন, ‘রফিক প্রতিদিনের মতো গতকাল জুম চাষে পাহাড়ে যায়। কিন্তু রাতে সেহরি খেতে না আসায় তাকে খুঁজতে বের হই। পরে জানতে পারি, তাদের পাঁচ জনকে ধরে নিয়ে গেছে। অবশেষে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে ফোনে মুক্তিপণ চেয়ে ৩০ লাখ টাকা দাবি করে অস্ত্রধারীরা। বিষয়টি আমি জনপ্রতিনিধিকে অবহিত করেছি।’
অপহৃত মো. নুরের মা খুরশিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে অস্ত্রধারীরা ধরে নিয়ে গেছে। তবে কে বা কারা নিয়ে গেছে এখনও জানা যায়নি। কিন্তু একটি নম্বর থেকে কল করে ছেলের মুক্তিপণ চেয়ে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছে। আমরা খুব গরিব, এত টাকা কীভাবে জোগাড় করবো? আমি ছেলে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছি।’
অপহৃত জিহানের মা ফাতেমা বেগম জানান, সকালে তার ছেলেসহ ৫ কৃষককে অপহরণের ঘটনা জানতে পারেন। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। দুপুরের দিকে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি মোবাইলে কল দিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
তিনি বলেন, এর মধ্যে মোহাম্মদ নুরের স্বজনদের কাছে ১৫ লাখ টাকা এবং অন্য চারজনের স্বজনদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ওই দুর্বৃত্ত।
তবে এই অপহরণের বিষয়ে ‘পুলিশ অবহিত নয়’ বলে জানিয়ে টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, অপহরণের বিষয়টি আমাকে কেউ এখনও অবহিত করেনি। তারপরও আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি। স্থানীয় কয়েক গণমাধ্যমকর্মীর কাছ থেকে ঘটনাটি শুনেছি। এ ঘটনার ব্যাপারে পুলিশের কাছে লিখিত বা মৌখিক কোনও ধরনের অভিযোগ আসেনি।
এদিকে গত ৯ মার্চ টেকনাফ উপজেলার হ্নীলায় অপহৃত মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ছোয়াদ বিন আব্দুল্লাহ (৬) ১২ দিনেও উদ্ধার হয়নি। যদিও পুলিশ এই অপহরণে ব্যবহৃত অটোরিকশার চালক ও সংঘবদ্ধ চক্রের নারী সদস্যসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার ও অপহৃত মাদ্রাসা ছাত্রকে উদ্ধারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান ওসি ওসমান গনি।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে পাহাড়কেন্দ্রিক ১০৩টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে ৫২ জন স্থানীয় এবং ৫১ জন রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে ফিরে আসা বেশির ভাগকেই মুক্তিপণ দিতে হয়েছে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]