
‘গত তিন-চার বছর (২০০৫ সালের আগে) ধান-চালের ব্যবসায় লোকসান গুনে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম আমি। হঠাৎ ব্যবসা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
এক আত্মীয়ের পরামর্শে ২০০৫ সালে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য মাছ, মুরগি ও গাভি পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলাম। পরে ধান-চালের ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় পুঁজি হারিয়ে; মাত্র ৪ লাখ টাকা দিয়ে এক হাজার লেয়ার মুরগী নিয়ে পোল্ট্রি খামার শুরু করলাম। শত বাঁধা আর প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি দমে যাইনি, নিরাশ হইনি। যেখানে আমি ব্যবসায় লোকসান নিয়ে দিশেহারা ছিলাম, সেখানে আমার এখন প্রতিমাসে আয় ৫ লাখ টাকা।’
এভাবেই এ প্রতিবেদকের কাছে নিজের সফলতার গল্প তুলে ধরেন উদ্যোক্তা মো. সালেহ আহাম্মেদ। তিনি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের নূনখোলা এলাকার মরহুম আলহাজ সবুর উদ্দিনের ছেলে।
উদ্যোক্তা মো. সালেহ আহাম্মেদ বলেন, প্রথমে তার নিজ বাড়িতে একটি মুরগির শেড তৈরি করে এক হাজার লেয়ার মুরগি পালন শুরু করেন। এরপর তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে চার একর জমির মধ্যে তার ১০টি ভালো মানের মুরগির শেড এবং তাতে প্রায় ২০ হাজার মুরগি রয়েছে। যা থেকে তিনি দৈনিক প্রায় ১৫ হাজার ডিম পেয়ে থাকেন। এছাড়া দুই একর জমির মধ্যে রয়েছে দুটি পুকুর। এতে চাষ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
তিনি আরও বলেন, মুরগি পালনে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি। বর্তমানে আরও দুইটি মুরগির শেড তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ দুই শেডের জন্য আরও ১০ হাজার পুলেড মুরগি প্রস্তুত করা হচ্ছে। তার খামারে ১৩ জন পুরুষ ও ২জন নারী শ্রমিক কাজ করেন।
তাদের প্রতিমাসে প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা করে বেতন প্রদান করা হয়। পোল্ট্রি খামার থেকে তার প্রতিমাসে আয় ৫ লাখ টাকা। খামার করে নিজে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার বেশ কিছু বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন তিনি।
সরেজমিনে দেখা যায়, তার ১০টি শেডে হাজার হাজার মুরগি। মুরগির খাবারের পাত্রে খাদ্য সরবরাহ করছেন সালেহ আহাম্মেদ ও শ্রমিকরা। কেউ তুলছেন ডিম, আবার কেউ দিচ্ছে পানি। এদিকে বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা ডিম কিনতে এসেছেন খামারে। খামারের শ্রমিক আনোয়ার বলেন, আমি দীর্ঘদিন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে পাওয়া বেতন দিয়ে খরচ শেষে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যেতো আমার। এখন নিজ এলাকার পোল্ট্রি খামারে কাজ করে যে বেতন পাই তাতে আমার সংসার খুব সুন্দর চলছে।
উদ্যোক্তা মো. সালেহ আহাম্মেদ বলেন, আমার আর্থিক অবস্থা এবং পোল্ট্রি খামার দেখে এলাকার অনেক বেকার ছেলে পোল্ট্রির খামার করে তারাও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ঘুরে পোল্ট্রি খামার করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। এতে বেকারত্ব ঘুচবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। তিনি শিক্ষিত বেকার যুবকদের পোল্ট্রি খামার করার আহ্বান জানান।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এটিএম ফায়েজুর রাজ্জাক আকন্দ বলেন, খামার একটি লাভজনক ব্যবসা। সালেহ আহাম্মেদের মতো অনেকেই খামার করে স্বাবলম্বী হয়ে হয়েছেন। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থার সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ পালন করে উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।
বিবার্তা/মনির/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]