৩ বছর ধরে বন্ধ তারাপুর সীমান্ত হাট, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ২০:৩৭
৩ বছর ধরে বন্ধ তারাপুর সীমান্ত হাট, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্ত হাট। এর ফলে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এ হাটের ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে হাট বন্ধ রাখলেও ব্যবসায়ীদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করেনি হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি। এর ফলে চরম অর্থসংকটে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।


গত করোনা মহামারির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য হাটের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রকোপ কমে যাওয়ায় দ্রুত সীমান্ত হাট খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।


সীমান্ত হাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের জুনে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ মালিকানায় যাত্রা শুরু হয় তারাপুর সীমান্ত হাটের। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার তারাপুর সীমান্তে এই হাটের অবস্থান।


সীমান্ত হাট ব্যবসার জন্য যতটা না চাঙা ছিল, তারচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ ছিল দুই বাংলার মানুষের সম্প্রীতির মেলবন্ধনের কারণে। পণ্য বেচাকেনার পাশাপাশি প্রতি হাটবার দুই বাংলার মিলন মেলা বসত এই সীমান্ত হাটে।


হাটে দুই দেশের ৫০টি করে মোট ১০০টি দোকান আছে। প্রতি রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলতো হোটের বেচাকেনা। মূলত সীমান্তের ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের কেনাকাটার জন্যই প্রতি হাটবার ১ হাজার মানুষকে হাটে প্রবেশের জন্য টিকিট দেওয়া হয়।


তবে হাট বন্ধ হওয়ার আগে সীমান্ত এলাকার বাইরের লোকজনও নিয়মিত আসতেন হাটে। তারা মূলত ভারতীয় পণ্য কিনে নিয়ে যেতেন ব্যাগভর্তি করে। আর এজন্যই হাটে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি।


কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাট বন্ধ হওয়ার আগে প্রতি হাটবারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের একেকজন ১০-২০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারতেন। আর ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জনপ্রতি বিক্রি করতেন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার পণ্য। ভারতীয় পণ্যগুলোর মধ্যে প্রসাধনী, শাড়ি, থ্রি-পিস ও শিশুদের ডায়াপারের চাহিদা ছিল বেশি। আর বাংলাদেশি পণ্যগুলোর মধ্যে বেশি বিক্রি হতো কাপড়, প্লাস্টিক ও লৌহজাত পণ্য এবং ক্রোকারিজ সামগ্রী।


গত কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে হাটের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দুই দেশের সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি। তারপর করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও হাট খোলার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি। কবে নাগাদ হাট খুলবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না হাটের বাংলাদেশ অংশের ব্যবস্থাপনা কমিটি।


তারাপুর সীমান্ত হাট কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, সীমান্ত হাট বন্ধ হওয়ার আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ২৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকার বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ লাখ ৭৭ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।


দীর্ঘদিন ধরে হাট না বসায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বিকল্প ভালো কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় অর্থকষ্টে আছেন।


তারাপুর সীমান্ত হাটের ব্যবসায়ী লিটন কর্মকার দেখা করলে তিনি জানান, হাটে তিনি দা-বটিসহ গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতেন। হাট বন্ধ হওয়ার আগে দোকানে ২ লাখ টাকার পণ্য তুলেছিলেন। কিন্তু হাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয় বাজারে কম দামে কিছু পণ্য বিক্রি করেন। এছাড়া তার দোকানে যে দুইজন শ্রমিক কাজ করতেন, হাট বন্ধ হওয়ায় তারাও এখন কর্মহীন হয়ে অর্থকষ্টে আছেন। হাট ব্যবস্থাপনা কমিটিও ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করেনি বলে জানান তিনি।


ওয়ালিউল্লাহ সরকার নামে আরেক ব্যবসায়ী কথা বললে তিনি জানান, হাটে তার কাপড়ের দোকান ছিল। হাট বন্ধের কারণে তার দোকানের অন্তত দেড় লাখ টাকার কাপড় নষ্ট হয়েছে। সেগুলো শীতের কাপড় ছিল। আর গত কোভিডের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় সেগুলো স্থানীয় কোনো মার্কেট বা দোকানে বিক্রি করতে পারিনি। দীর্ঘ সময় ধরে হাট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এখন সবকিছুই পূর্বের মতন স্বাভাবিক নিয়মে চলছে, তাই দ্রুত সীমান্ত হাট খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কসবা উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও তারাপুর সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সন্ঞ্জিব সরকার বলেন, ‘হাটের বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক। গত আগস্ট মাসে হাট খোলার ব্যাপারে দুই দেশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ এ নিয়ে আলোচনা সভা করেছেন। তবে তাদের (ভারত অংশের ব্যবস্থাপনা কমিটি) আগ্রহ আছে। দুই দেশের সরকারি সিদ্ধান্ত হলে হাট খুলে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত হাট খোলার ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি আমাদের। হাট খুলে দেওয়ার নির্দেশনা আসলে হাটের প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করে খুলে দিব আমরা।"


বিবার্তা/নিয়ামুল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com