খানসামায় ছড়িয়ে পড়েছে পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩, ২১:১০
খানসামায় ছড়িয়ে পড়েছে পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশুর এলএসডি বা লাম্পি স্কিন ডিজিজ ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বেই লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে একটি গরু মারা গেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন গরুর খামারীরা। তারা এ রোগের প্রতিরোধ-প্রতিকারে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার সহজপুর, বাসুলী, মাদার দরগাহ, গোবিন্দপুর, ছাতিয়ানগড়, ভেড়ভেড়ী, খামারপাড়া, কাচিনীয়াসহ বিভিন্নস্থানে এই রোগের প্রার্দুভাব দেখা যাচ্ছে।


উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র পাকের হাটের ইজারাদার বিবার্তাকে জানান, শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে গরু-ছাগল কিনতে আসেন বেপারিরা। তবে বর্তমানে হাটে প্রচুর পরিমাণে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু আসছে। সেই গরুগুলো বাইরের বেপারিরা কিনতে চাইছেন না।


এদিকে আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান নেই প্রাণিসম্পদ বিভাগের কাছে। তবে খামারী ও গৃহস্থদের ক্যাম্প ও মুঠোফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।


উপজেলার পূর্ব বাসুলী গ্রামের খামারি ওসমান আলী বিবার্তাকে বলেন, আমার খামারের গরুর শরীরে হঠাৎ করে টিউমারের মতো গুটি গুটি কী যেন বের হয়েছে! এটা হওয়ার পর থেকেই খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দিয়ে শুধু ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। পশু ডাক্তারকে দেখিয়েছি, তারা ওষুধ দিয়েছে। দেড় সপ্তাহ হয়ে গেছে। গরুর শরীরে কোনো পরিবর্তন হয়নি।


গাভী নিয়ে একই সমস্যায় পড়েছেন একই গ্রামের নূর ইসলাম। তার গাভী প্রতিদিন দেড় কেজি দুধ দেয়। কিন্তু ছয় দিন ধরে গাভীটির চামড়ায় ছোট ছোট টিউমারের মতো গুটি বের হয়েছে এবং যথারীতি খাওয়াদাওয়াও কমিয়ে দিয়েছে। এতে করে দুধের পরিমাণও কমে গেছে।


গরুর খামারি জয়নাল আলী বিবার্তাকে বলেন, এক মাস ধরে আমার গাভীর গায়ে গুটি বের হয়েছে। ডাক্তার প‍্যারাসিটামল আর হিস্টাসিন বড়ি দিয়েছেন। তাই খাওয়াচ্ছি। তবে এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখনও সারেনি।


জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের পল্লি চিকিৎসক জুয়েল বিবার্তাকে বলেন, আমাদের কাছে প্রায় প্রতিদিনই লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু নিয়ে আসছেন খামারিরা। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে সেরে উঠতে মাসখানেক সময় লাগছে। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে ব‍্যথা অনুভূত হয়।


এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হুমায়ুন কবির বিবার্তাকে বলেন, প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টা গরু আমাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসছে। এসময়ে সারাদেশে কম বেশি এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশু। আমরা সাধ্যমত চিকিৎসা দিচ্ছি। এ নিয়ে খামারিদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। রোগটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও সময়মত চিকিৎসা নিলে এর প্রভাব তেমন একটা ক্ষতিকর না। এটি কম বেশি সারা বছর ছিল। কিন্তু গত এক মাসে এই রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে। এই রোগের ভ্যাকসিন থাকলেও খামারিরা পশুকে ভ্যাকসিন দিতে তেমন একটা আগ্রহী হয়না, ফলে এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে সব জায়গায়। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প করে সুস্থ গরুগুলোকে ভ্যাকসিন দিচ্ছি। আর যেসবের এলাকায় এসব রোগ আক্রান্ত হয়েছে ওই এলাকায় গরু সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাকসিন দিতে পারছি না। খামারিদের কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে- গোয়ালঘর পরিষ্কার রাখতে হবে, প্রতিনিয়ত জীবাণুনাশক ব্লিচিং পাউডার স্প্রে করতে হবে। মশা মাছি আক্রান্ত করতে না পারে এজন্য মশারি ব্যবহার করতে হবে।


বিবার্তা/জামান/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com