টাঙ্গাইলে চামড়া আছে ক্রেতা নেই
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৩, ১৬:২৩
টাঙ্গাইলে চামড়া আছে ক্রেতা নেই
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইলে কোরবানির পশুর চামড়া ফুট হিসেবে নয়- পিস হিসেবে বেচাকেনা হয়ে থাকে। জেলার বৃহত্তর চামড়ার হাট ঘাটাইলের পাকুটিয়ায় বিপুল পরিমাণ চামড়া আমদানি হলেও ক্রেতা নেই। সপ্তাহে রবি ও বুধবারে বসা এ হাটের প্রতি বারে সাধারণত কোটি টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। এবার মাঠ পর্যায়ে মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনে ফড়িয়ারা হাটে উঠিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে ছাগলের চামড়া বেচাকেনা হতে দেখা যায়নি- গরুর চামড়ার সাথে ফ্রি নেয়া হয়েছে। তবে কোনো কোনো স্থানে ছাগলের বড় চামড়া ১০-২০ টাকায় কেনা হয়েছে ও ছোট ছাগলের চামড়া ফেলে দিতে দেখা গেছে।


মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা জানায়, গ্রামে গ্রামে গিয়ে সামাজিকভাবে কোরবানি দেয়া গরুর চামড়া প্রতি পিস ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে কেনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সেগুলো ধুয়ে লবণ মাখিয়ে পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে রবিবার (২ জুলাই) সকালে উঠানো হয়। বৃষ্টির কারণে লবণ দেয়া চামড়াগুলো শুকানো যায়নি। কোরবানির পর প্রথম হাট হওয়ায় অধিকাংশ বেপারী পাকুটিয়ার হাট থেকে রবিবার চামড়া কেনেননি। ২-৪ জন বেপারী মাঝারি আকারের গরুর চামড়া প্রতি পিস ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে কিনেছেন।


তারা জানায়, প্রতি পিস ২০০-৫০০ টাকায় গরুর চামড়া কিনে প্রাথমিকভাবে লবণ দেয়ার পরও ৩০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করলে লোকসান হবে। তাই বিক্রি না করে আবারও লবণ দিয়ে রোদে শুকিয়ে আড়তদারদের কাছে বা আগামী বুধবার (৫ জুলাই) বা রবিবার (৯ জুলাই) পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে আবার উঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া ছাগলের চামড়ার কোনো আড়তদার হাটে না আসায় বড় আকারের ছাগলের ১০০টি চামড়া ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে।


মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আজগর আলী জানান, তিনি গ্রামাঞ্চল থেকে মাঝারি আকারের ৬০টি গরুর চামড়া প্রতি পিস ৪৫০টাকা দরে কিনে লবণ দিয়েছেন। রোদ না থাকায় শুকানো যাচ্ছে না। বিক্রি করতে চাইলে পাইকার বা আড়তদাররা প্রতি পিস ৫০০টাকা দাম করছেন। এতে তার লোকসান হবে।


অপর মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মোস্তফা জামান জানান, তিনি গরুর নাগড়া অর্থাৎ বড় আকারের ১২পিস চামড়া ৮০০ টাকা দরে কিনে প্রাথমিকভাবে লবণ মাখিয়েছেন। পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে উঠানোর পর পাইকাররা প্রতি পিস ৯০০টাকা দাম করছেন। প্রতি পিস ১২০০ টাকার কমে বিক্রি করলেও তার লোকসান হবে।


চামড়া ব্যবসায়ীরা জানায়, ঈদের দিন (বৃহস্পতিবার) ও পরদিন (শুক্রবার) টাঙ্গাইল জেলায় ৬০-৬৫ হাজার পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে লবণ দিয়ে পাকুটিয়া হাটে নেয়া হয়। রবিবার (২ জুলাই) পাকুটিয়ার চামড়ার হাটে অধিকাংশ চামড়া বিক্রি না হওয়ায় আড়তে এনে আবার লবণ মাখিয়ে ডাবর (লবণ দিয়ে স্তূপ করা) দেয়ার প্রক্রিয়ায় রাখা হয়েছে। ১৫-২০ দিনের মধ্যে সেগুলো ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পাঠানো হবে।


চামড়া ব্যবসায়ীদের মতে, টাঙ্গাইলে পিস হিসাবে চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে। জেলার প্রতিটি গ্রামে একাধিক সমাজ ব্যবস্থা রয়েছে। পৃথক পৃথকভাবে কোরবানি দেয়া হলেও চামড়াগুলো একত্রে সামাজিকভাবে বিক্রি করা হয়। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা গ্রামাঞ্চলের সমাজের কাছ থেকে অনেকটা কম দামে চামড়া সংগ্রহ করে পাইকারদের কাছে কিছুটা মুনাফা নিয়ে বিক্রি করে দেয়। গ্রামাঞ্চলের চামড়াগুলোর দাম কিছুটা কম থাকে। কারণ, গ্রামাঞ্চলে কোরবানি দেয়া গরুর আকার সাধারণত ছোট হয়।


শহরাঞ্চলে বড় গরু কোরবানি দেয়া হয় বলে দামও কিছুটা বেশি হয়। আড়তদার আহাম্মদ আলী ও আলী হোসেন জানান, ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৪৫-৪৮ টাকা- যা গতবার ছিল ৪০-৪৪ টাকা। তবে গরুর চামড়ার দাম বাড়লেও খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা আর বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকায় অপরিবর্তিত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু টাঙ্গাইল জেলায় বর্গফুট নয়- পিস হিসেবে চামড়া বেচাকেনা হয়। ফড়িয়ারা মাঠ পর্যায় থেকে যে মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করেছে তাতে লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে। তারা ইচ্ছে করলেও সরকারিভাবে বেধে দেয়া দামের বেশি দিয়ে চামড়া কিনতে পারছেন না।


জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর এক লাখ ৮৫ হাজার ২৬৩টি কোরবানির মধ্যে এক লাখ ১২ হাজার ৫৮১টি ছাগল ও চার হাজার ৪১টি ভেড়া কোরবানি হয়েছে।


মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মতে, এর মধ্যে ছাগলের চামড়া ৬০-৬৫ হাজার বেচাকেনা হয়েছে। অন্যগুলো মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার সাথে ফ্রি দিতে হয়েছে অথবা ফেলে দিতে হয়েছে। ভেড়ার চামড়া ২০-২৫টি সংগ্রহ করা গেছে- অন্যগুলো ফেলে দেয়া হয়েছে। তাদের মতে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা বড় ধরনের মুনাফা করার আশায় থাকেন। গত কয়েক বছর যাবত তা আর হচ্ছে না। তবুও আশায় থাকেন তারা।


পাকুটিয়া চামড়ার হাটের ইজারাদার মো. রাকিব খান জানান, এ বছর প্রায় ৩২ লাখ টাকায় হাটের ইজারা নিয়েছেন। কোরবানির প্রথম হাট হিসেবে চামড়ার আমদানি হলেও বিক্রির সংখ্যা খুবই কম। ফড়িয়ারা কিছু চামড়া কিনে বিক্রি করতে না পেরে হাটের গোডাউনে ডাবর (লবণ দিয়ে স্তূপ করা) দিয়ে রেখে গেছেন। হাটে বেশিরভাগ আড়তদার আসেনি। প্রায় হাটেই ঢাকা থেকে কোম্পানি বা ট্যানারির প্রতিনিধিরা আসেন- তারাও আসেননি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- গত বছরের ন্যায় এবারও ফড়িয়ারা লোকসানের কবলে পড়বে।


টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া জানান, জেলায় এ বছর এক লাখ ৮৫ হাজার ২৬৩টি কোরবানি হয়েছে। এরমধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৬৪১টি। চামড়ার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখভাল করে থাকে। সঠিকভাবে পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য কোরবানিদাতাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তারপরও জবেহকৃত পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়াতে অনেকের ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে থাকতে পারে।


বিবার্তা/ইমরুল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com