শিরোনাম
মসজিদ ও এতিমখানার কমিটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২১, ১১:২৯
মসজিদ ও এতিমখানার  কমিটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
লামা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বান্দরবানের লামা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি সরই ইউনিয়নের রহমতখোলা জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে গত ৯ বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব না দিয়ে বিপুল পরিমাণে অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার আনসার আলীর ছেলে বাবর আলীসহ ১১২ জন মুসল্লী এ অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয়, বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ ও আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধারসহ আইনানুগ শাস্তি দাবী জানিয়ে কমিটির তিনজনকে বিবাদী করে লামা প্রেসক্লাবের পাশাপাশি প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন মুসল্লীরা।


অভিযুক্তরা হলেন- মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ আবদুল গফুর। বার বার হিসাব চাওয়ার পরও কর্ণপাত না করায় দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মুসল্লীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে যে কোন মুহুর্তে কমিটির নেতৃবৃন্দ ও মুসল্লীদের মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।


জানা যায়, সরই ইউনিয়নের কয়েকজন মুসল্লী লম্বাখোলা এলাকার রহমতখেলায় ১৯৯৭ সালে একটি মসজিদ স্থাপন করেন। পরবর্তীতে এলাকায় ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারের জন্য মসজিদের পাশাপাশি একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা স্থাপন করেন এলাকাবাসী। প্রতি পরিবারের নিয়মিতভাবে প্রতি মাসের মুষ্ঠি চাল, মাসিক টাকা অনুদান, প্রতিবছর একবার ধান সংগ্রহ, পুকুরে মাছ চাষ, জমির ওপর সৃজিত গাছ বিক্রি ও নার্সারী থেকে আয়, জুমার নামাজের সময় প্রাপ্ত অনুদান, এককালীন বিভিন্ন ব্যক্তি থেকে প্রাপ্ত অনুদান, দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত অর্থের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। পাশাপাশি উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার জন্য পাশের কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে মাদ্রাসার শিক্ষকের বেতন, এতিমখানার শিক্ষার্থীদের জন্যে প্রতিদিন চাল, ডাল, আলু, তেল ইত্যাদি সামগ্রী প্রদানের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছে। এছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা বিশেষ অনুদান প্রদান করেন প্রতিষ্ঠানগুলোতে।


মুসল্লিদের অভিযোগ- প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনই মাদ্রসা, হেফজখানা, এতিমখানা ও জামে মসজিদের আয় ব্যয়ে কোন হিসাব প্রকাশ করেনি পরিচালনা কমিটি। মুসল্লীরা প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক আয় ব্যয়ের হিসাব নিকাশ চাইলে কমিটির লোকজন বলেন ‘তোমরা হিসাব চাওয়ার কে?’ শুধু তাই নয়, বর্তমান মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম গর্বের সাথে বলেন- মসজিদ, মাদাসা আমাদের বাপ চাচারা দিয়েছেন। তাই আমাদের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তার এ উক্তির কারণে সমাজের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগণের মনে অসন্তোষ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এসব অনিয়ম উক্তির কারণে বিভিন্ন সময় কমিটি থেকে অনেক সদস্য নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ পদে কয়েকবার পরিবর্তন হলেও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রতষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ সুবাধে তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের অর্থের হিসাব না দিয়ে বরং বিপুল পরিমাণের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।


প্রতিষ্ঠানগুলোর সহকারী কমিটির সভাপতি আবদুর শুক্কুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কমিটির লোকজন ২০১১ সাল থেকে আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব প্রকাশ না করায় পদত্যাগ করেছি।


ধর্মীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও কমিটির এরুপ আচরণ কোন মতেই গ্রহণযােগ্য নয়।


স্থানীয় মুসল্লি এখলাছ সওদাগর (৫৫), এলাকার সাবেক সর্দার আবু বক্কর (৭০) ও মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল আজিজ (৮০) জানান, ২০১১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় ব্যয়ের হিসাব দেয়ার জন্য শতাধিকবার বলার পরও কমিটির লোকজন কোন কর্ণপাত করছেন না। তারা বলেন, কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ অভিযোগে উল্লেখিত কমিটির সভাপতি শামসুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ আব্দুল গফুর মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানার নাম ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশের জমি দখলসহ জমি বিরোধ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ও মামলা হামলা করছেন। মূলত তারা সকলে মিলে একটি কুচক্রী সিন্ডিকেট তৈরি করে এ ধর্মীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠানসমূহের জমি বেচা, অর্থ, সম্পদ আত্মসাৎসহ এলাকায় জাহেলী যুগের অপসংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, অভিযুক্তরা এতিমখানা ও হেফজখানার হত দরিদ্র শিশুদের দৈনন্দিন খাবার ব্যবস্থায় জঘন্য অন্যায় করতেও কোন দ্বিধাবোধ করছেন না। অভিযুক্তদের কারণে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।


এদিকে মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের বিরুদ্ধে মুসল্লিদের আনিত অভিযোগ মোটেই সত্য নয়। এটি আমাদের বিরুদ্ধে একটি মহলের ষড়যন্ত্র মাত্র।


রহমতখোলা মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে মুসল্লীদের অভিযোগ প্রদানের সত্যতা নিশ্চিত করে সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফরিদ উল আলম বলেন, মুসল্লিদের অভিযোগের বিষয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। কিন্তু পক্ষদ্বয় পরিষদের সিদ্ধান্ত না মানায় মিমাংশা করা সম্ভব হয়নি।


বিবার্তা/আরমান/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com