শিরোনাম
বগুড়ার বাঁধাকপি যাচ্ছে বিদেশে, দামে খুশী কৃষক
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:০০
বগুড়ার বাঁধাকপি যাচ্ছে বিদেশে, দামে খুশী কৃষক
বগুড়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কৃষি অর্থনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে।আলুর পর বগুড়ারবাঁধাকপি এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শাহাদুজ্জামান জানান, বগুড়ায় উৎপাদিত সবজির মধ্যে এখন বাঁধাকপি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ ছয়টি দেশে রফতানি হবে। এরই মধ্যে প্রায় ৭০০ টন অর্থাৎ চার লাখ আট হাজার পিস বাঁধাকপি পাঠানো হয়েছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গপুরে। আরো ১৬ কন্টিনিয়ারে ৩৩৬ টন বাঁধাকপি পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। বাঁধাকপি রফতানি হওয়ায় ভালো দাম পেয়ে উৎফুল্ল এখন এই অঞ্চলের বাঁধাকপি চাষীরা।


সবজির এই ভরা মৌসুমে যখন উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সবজি বাজারখ্যাত মহাস্থানহাটে ২-৫ টাকা দরে প্রতিটি বাঁধাকপি বিক্রি হতো, এখন সেই হাটেও ভালো দাম পাচ্ছে কৃষক। আর যেসব চাষী সরাসরি জমি থেকে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে কপি সরবরাহ করছেন তারা পাচ্ছেন আরো বেশি দাম। বাঁধাকপি প্রতি পিস রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কিনছে ১৩ থেকে ১৬ টাকা দরে।


বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার যুবক সাগর হোসেন বিদেশে এই বাঁধাকপি পাঠানোর উদ্যোক্তা। তার মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে বগুড়ার বাঁধাকপি। এই দুই দেশে এক হাজার ৫০ টন বাঁধাকপি পাঠানোর জন্য তিনি ইতিমধ্যেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এই কপিসহ অন্যান্য সবজি বিদেশে পাঠাতে বিশেষ প্যাকেজিং কাজের জন্য তিনি নিজ বাড়িতেই প্যাকিংব্যাগ তৈরির কারখানাও স্থাপন করেছেন।


জেলার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলা মূলত: সবজি প্রধান। এই উপজেলার জমিগুলো তিন ফসলী হলেও অধিকাংশ জমিতে বছরজুড়েই নানা সবজি উৎপাদন হয়। তারমধ্যে এবার ৩০০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি এবং ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩২ টন হিসেবে ৩০০ হেক্টর জমিতে এবার ৯ হাজার ৬০০ টন বাঁধাকপি উৎপাদন হবে।


তিনি বলেন, মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারি বাঁধাকপি রফতানির উদ্যোগ নেয়ায় এবার কৃষকদের হাটে-হাটে এই সবজি নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে না। যদিও তারা বাঁধাকপি কেনার ক্ষেত্রে আগে থেকেই কৃষকদের কিছু শর্ত দিয়েছেন; বিশেষ করে বিদেশে রফতানির জন্য অবশ্যই সবজিকে বিষমুক্ত হতে হবে। সেই শর্ত মেনেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কপি তার কাছে বিক্রি করছেন।


মেসার্স সাগর ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারি সাগর হোসেন জানান, ২০১৪ সাল থেকে তিনি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাঁধাকপি রফতানি শুরু করেন। এরই মাঝে চট্টগ্রামের মাসোয়া এগ্রো লিমিটেড নামক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারি আরিফ আজাদ প্রিন্স মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ঘুরে এসে ওই দুই দেশে বাঁধাকপি রফতানিতে তাকে উদ্বুদ্ধ করেন। ইতিপূর্বে তিনি বছরে ৬ থেকে ১০ কন্টিনিয়ার (প্রতি কন্টিনিয়ারে ১২ হাজার পিস বাঁধাকপি যার ওজন প্রায় ২১ টন) পাঠিয়েছেন। কিন্তু এবার ওই দুই দেশের ক্রেতাদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তিনি আগাম ৫০ কন্টিনিয়ার বাঁধাকপি পাঠাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ইতিমধ্যে বাঁধাকপি জমি থেকে উত্তোলন করে কৃষকরা তার কাছে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। তিনি নগদ টাকায় তাদের কাছ থেকে সেসব বাঁধাকপি কিনে উপজেলা সদরের কাফেলা কোল্ড স্টোরেজে তা প্যাকেজিং করে পাঠাতে শুরু করেছেন।


তিনি বলেন, বাজারে বাঁধাকপি বিক্রি করে প্রতি পিসে কৃষকরা যে টাকা পেতেন তার চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি পাচ্ছেন। তিনি প্রতিপিস কপি নিচ্ছেন ১৩ থেকে ১৬ টাকায়, আর মহাস্থান বাজারে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১০-১২ টাকায়।


শিবগঞ্জ উপজেলার টেপাগাড়ি গ্রামে কৃষক আজাহার আলী জানালেন, এবার যেমন ফলন ভালো হয়েছে তেমনি দামও ভালো পাচ্ছেন। নিজের ৩ বিঘা জমির মধ্যে বাঁধাকপি আবাদ করেছিলেন ২ বিঘা এবং ফুলকপি ১ বিঘা জমিতে। বাঁধাকপিতে এখন পর্যন্ত খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেছেন প্রায় ৭০ হাজার টাকা।


বগুড়া সদরের লাহেড়ি পাড়া এলাকার কৃষক আবেদ সরকার ৫ বিঘা জমির সবজি আবাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এক বিঘা জমির বাঁধাকপি থেকে প্রায় ৩৫/৩৬ হাজার টাকা লাভ করেছেন।


চট্টগ্রামের মাসোয়া এগ্রো লিমিটেড নামক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারি আরিফ আজাদ প্রিন্স জানান, তিনি নিজে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হলেও সম্ভাবনা ও বিদেশি বায়ারদের আগ্রহ দেখে ব্যবসায়িক ঝুঁকি নিয়েই বগুড়ার বাঁধাকপি রফতানির কাজ শুরু করেছেন।


তিনি বলেন, আমাদের এই বাঁধাকপি মালয়েশিয়া বাজারে বাংলাদেশি টাকায় ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। পাঠানো থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি হতে কমপক্ষে ১০-১২ দিন সময় লেগে যায়।


কৃষি কর্মকর্তারা জানান, যখনই কোনো পণ্য বিদেশে যাবে তখন যেমন এলাকার সুনাম বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সেই এলাকার কৃষকরা লাভবান হবেন। সেই কাজটিই এখন শুরু হয়েছে শিবগঞ্জে। আলুর পর বাধাকপি রফতানি এই অঞ্চলে নতুন অর্থনীতির দ্বার উন্মোচিত করেছে।


কৃষকদের বিদেশে কপি পাঠাতে সরকারি উদ্যোগে যে যে সুবিধা দেয়া প্রয়োজন তা নিশ্চিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জাইকা ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com