শিরোনাম
রায়হান হত্যা মামলায় ৩ পুলিশের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৪৭
রায়হান হত্যা মামলায় ৩ পুলিশের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সিলেটে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য। সোমবার (১৯ অক্টোবর) সকালে তারা আদালতে হাজির হয়ে এ জবানবন্দি দেন।


এর আগে ১২ অক্টোবর পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী।


মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, আমার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে হাত-পায়ে আঘাত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।


ইতিমধ্যে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় জবানবন্দি দিয়েছেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক। রায়হানকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দেন সুইপার সুলাই লাল।


ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সুইপার সুলাই লাল বলেন, ১১ অক্টোবর রায়হানকে আমার ঘর থেকে সুস্থ অবস্থায় ধরে নেয়া হয়। ওই রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দরজায় শব্দ শুনে আমার ঘুম ভেঙে যায়। তাকিয়ে দেখি ছেলেটি (রায়হান) দরজা ধাক্কা (ধাক্কায় জোড়াতালির ছিটকানি ছুটে যায়) দিয়ে ঘরে ঢুকেছে। আমি মনে মনে ভয় পেলাম। এত রাতে আমার দরজা ঠেলে কে এল? আমি জিজ্ঞাসা করলাম- কে ভাই আপনি? তখন দেখলাম ছেলেটি নিঃশ্বাস নিতে পারছে না, কথাও বলতে পারছে না। এর পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশ এসে হাজির। পুলিশ বাসায় ঢুকে রায়হানকে ধরে। কিন্তু সে যেতে চাচ্ছিল না এবং আমাকে বলছিল- আমি ছিনতাইকারী না। আমিও ভয়ে কিছু বলার মতো অবস্থায় ছিলাম না।


সুলাই লাল বলেন, ছেলেটিকে আমার বাসা থেকে সুস্থ অবস্থায় আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন শুনি ছেলেটি নাকি ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছে। শুনে মনটা খুব খারাপ হলো। তবে এখানে কোনো গণপিটুনি হয় নাই, আমি নিশ্চিত।


এদিন কাস্টঘরেও কোনো গণপিটুনির ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিক তদন্তেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মেলেনি গণপিটুনির কোনো প্রমাণ।


এদিকে চাঁদা না পেয়ে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হানকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।


অন্যদিকে এ ঘটনায় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ (সিএমপি)।


সাময়িক বরখাস্ত চার পুলিশ সদস্য হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। আর প্রত্যাহার তিন পুলিশ সদস্য হলেন- এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন।


এ ঘটনায় সিএমপি গঠিত তদন্ত কমিটি জানতে পারে, ১১ অক্টোবর রাত ৩টায় আহত অবস্থায় রায়হানকে উদ্ধার করে সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে এনে রাখে পুলিশ। আহত হওয়ার পরও তাকে হাসপাতালে না নিয়ে পুলিশ ফাঁড়ির হাজতে রাখা হয় এবং আইনগত কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না।


সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে আখালিয়া এলাকার রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে- এমন অভিযোগ পেয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া স্যার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।


কমিটির প্রধান করা হয় এসএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আলম মামুনকে। কমিটিতে কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী ও এয়ারপোর্ট থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রভাষ চন্দ্রকে সদস্য করা হয়। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থা নেয় এসএমপি।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com