মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ায় লবিং ও তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। প্রার্থীরা যে যার মতো ছুটছেন দলীয় মনোনয়ন পেতে। ভোটার, দলের নেতাকর্মী ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আর্কষণে চালাচ্ছেন নানা তদবির ও কৌশল। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রার্থীদের আগাম প্রচার-প্রচারণাতো আছেই। তবে যাদের জন্য এই নির্বাচনের আয়োজন সেই ভোটাররা অনেকটাই নিশ্চুপ।
মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীণ রাজনীতিবীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আজিজুর রহমান গত ১৮ আগস্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর আসনটি শূন্য হলে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ তফাদার রিজুয়ানা ইয়াসমিন সুমি ৬ সেপ্টেম্বর অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। গত ১৪ সেপ্টম্বর বাংলদেশ নির্বাচন কমিশন ২০ অক্টোবর উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালালেও তারিখ ঘোষণার পর থেকে মাঠে সক্রিয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। তবে দলীয় প্রার্থীর তালিকায় এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
এদিকে তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে লড়তে জোর লবিং শুরু করেছেন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন অনেকেই। জেলার শীর্ষ পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত লবিং করে যাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আমলনামা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ দলের নিজস্ব উইংয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌঁছেছে।
অপরদিকে দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিতরা মনোনয়ন পাবেন না-এটা দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি ক্লিন ইমেজের প্রার্থী।
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুর রউফ মাণিক বলেন, আজিজুর রহমানের বিকল্প হবে না। তাই আজিজুর রহমানের আদর্শ মেনে কেউ এই পদের জন্য যদি নির্বাচন করে আমরা তাকে সাহায্য করব।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে ইতোমধ্যে লবিং শুরু করেছেন প্রায় হাফ ডজন আওয়ামী লীগ নেতা। প্রকাশ্যে এ নিয়ে অনেকে কথা না বললেও তারা ঢাকা কেন্দ্রিক জোর লবিং চালাচ্ছেন। তবে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল প্রতিদ্বনিদ্বতা হবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান ,সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর স্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দা সায়রা মহসিন এবং প্রয়াত আজিজুর রহমানের ভাতিজা জেলা যুবলীগের সভাপতি নাহিদ আহমদের মধ্যে।
স্থানীয় রাজনীতিতে এই তিনজনের দীর্ঘদিনের একটি অবস্থান আছে। মিছবাহুর রহমান দলীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ ছিলেন সৈয়দ মহসিন আলী। তার অনুসারীদের দাবি- সায়রা মহসিন কে মনোনয়ন দেয়া হোক।
তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নেবেন জানিয়ে সৈয়দা সায়রা মহসিন বলেন,সৈয়দ মহসিন আলী সারাজীবন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। আমিও সেই আদর্শ লালন করি। নেত্রী আমাকে সুযোগ দিলে মানুষের জন্য কাজ করে যাব।
অন্যদিকে আজিজুর রহমানের ভাতিজা জেলা যুবলীগের সভাপতি নাহিদ আহমদ পরিবারের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে আছেন। সদ্য প্রয়াত আজিজুর রহমানের প্রতি যে আবেগ তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে রয়েছে তা নাহিদকে প্রার্থী হতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বটবৃক্ষ ছিলেন আজিজুর রহমান। দলীয় সভানেত্রীর কাছেও একজন সৎ ও অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তার। তিনি চিরকুমার থাকায় তার নিজের কোনো ছেলে-মেয়ে নেই। তার আপন ভাতিজা জেলা যুবলীগের সভাপতি ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত নাহিদ আহমদ। আজিজুর রহমানের উত্তরসূরি হিসেবে তার পরিবার থেকে মনোনয়ন চাইবেন নাহিদ আহমদ।
এ বিষয়ে নাহিদ আহমদ বলেন, চাচার হাত ধরেই রাজনীতিতে আসা। চাচা যে আদর্শের ছিলেন সেটাই আমাদের শিখিয়েছেন। আমি চাচার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে চাই।
মনোয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান। তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন চাইবো। বাকিটা নেত্রীর সিদ্ধান্ত। আমাদের নেত্রী যাকে প্রার্থী করবেন তার পক্ষেই কাজ করে যাব। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
মনোনয়ন দৌড়ে অংশ নিয়েছেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সাবেক ব্রিটিশি কাউন্সিলর ও শিক্ষানুরাগী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ. রহিম (সি.আই.পি)। তিনিও লবিং করে যাচ্ছেন। করোনা সঙ্কটে তিনি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন এটি তার জন্য পজিটিভ মনে করছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে রেখে আমি দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এতে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। যদি নেত্রী মনে করেন আমি যোগ্য তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাব।
প্রায় একই বক্তব্য প্রদান করলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুহিবুর রহমান তরফদার। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, আমি মনোনয়ন চাইবো। বাকিটা নেত্রীর সিদ্ধান্ত। নেত্রী যাকে প্রার্থী করবেন তার পক্ষেই কাজ করে যাব। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তবে আওয়ামী লীগে যখন প্রার্থীদের জট তখন ঠিক উল্টো চিত্র বিরোধী শিবিরে। ঐক্যফ্রন্ট অনেকটা অস্থিত্ব সঙ্কটে। বিএনপি এখনও দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না তা নিশ্চিত নয়। পূর্বের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রার্থী হওয়া অনেকটা রিস্কি মনে করছেন নেতারা। কেউ প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথাও বলছেন না। সবাই তাকিয়ে আছেন দলীয় সিদ্ধান্তের দিকে। নেই প্রার্থী হওয়ার তোড়জোড়।
তবে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের বড় একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে। খালি মাঠে আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দিতে রাজি নয় তারা। এই ক্ষেত্রে প্রার্থী হতে পারেন ক্লিন ইমেজের নেতা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ায় এবং দলীয় গন্ডির বাইরেও সাধারণ মানুষের কাছে ক্লিন ইমেজের কারণে মিজান শক্ত প্রার্থী হতে পারেন বলে তাদের দাবি।
তবে এই প্রতিবেদককে উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমাকে অনেকেই বলেছেন প্রার্থী হতে। তবে এই পদে নির্বাচনের জন্য আমি ভাবছি না। এটা তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি।
বিএনপি, জামাত ও ইসলামী ঐক্যজোটসহ অন্যান্য সংগঠনের কাউকে প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাতে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলার ৬৭টি ইউনিয়ন, ৫টি পৌরসভা ও সাতটি উপজেলা মিলে ৯৪৩ জন নির্বাচকমন্ডলীর সদস্য (ভোটার) রয়েছেন। চেয়ারম্যান একজন, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের পাঁচজন নারী সদস্য নিয়ে গঠিত জেলা পরিষদ।
বিবার্তা/আরিফ/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]