
কথায় আছে, ‘এখন কিছু ফেলনা নয়’। মানুষের চুলও এখন কাজে লাগানো হচ্ছে। পাটকাঠির ছাই দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কার্বন। তেমনই নারিকেলের অব্যবহৃত অংশ মালা (খোল বা আঁচাই) দিয়ে দেশের অনেক স্থানে বানানো হচ্ছে নানা পণ্য।
যশোরেও মালা দিয়ে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন চায়ের কাপ, পানপাত্র, বাটি, সাধুবাটি, কলমদানি, ফুলদানি, ছাইদানি, আইসক্রিম খাওয়ার চামচসহ বিভিন্ন সামগ্রী। পরম যত্নে নিজ হাতে এসব সামগ্রী তৈরি করছেন করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া যশোরের ধর্মতলার বাউল পরিতোষ। যার করোনাপূর্ব নেশা ও পেশা ছিল বিভিন্ন স্থানে গান গাওয়া। পাশাপাশি নরসুন্দরের কাজ। কিন্তু করোনাকালে তা বন্ধ রয়েছে। কর্মহীন অফুরন্ত সময় কাজে লাগাতে তিনি নারিকেলের মালায় জীবিকার স্বপ্ন দেখছেন। বেঁচে থাকার তাগিদে প্রথাগত প্রশিক্ষণ না থাকলেও শিল্পীসত্ত্বার এক অনন্য সৃষ্টিশীলতায় মেতে উঠেছেন তিনি। আর্থিক অনটনেও নিজের শিল্পীসত্ত্বা হারিয়ে ফেলেননি পরিতোষ বাউল।
আলাপকালে পরিতোষ বাউল বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনার ঝাপটায় সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের জীবিকা নির্বাহে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় অন্নসংস্থানে নারিকেলের মালা দিয়ে তৈরি করছেন দৃষ্টিনন্দন চায়ের কাপ, পানিপান পাত্র, বাটি, সাধুবাটি, কলমদানি, ফুলদানি, ছাইদানি ও আইসক্রিম খাওয়ার চামচ।
করোনার আগে পরিতোষ বাউল নিজের ও তার সাধু সংঘের বাউলদের জন্য তৈরি করতেন গুরুর কাছে শেখা নারকেলের মালার পানিপানপাত্র (সাধুমালা) ও লাউয়ের বসের একতারা। পরিচিত মহলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার তৈরি এ পানপাত্র ও একতারা।
অর্থাভাবে লেখাপড়া করতে না পারা স্বভাব গায়ক পরিতোষ বাউল জানান, গান ছাড়া আরতো কিছু পারি না। তাই করোনার থাবায় জর্জরিত বেকার জীবনের অফুরন্ত সময়ে পহেলা বৈশাখের (১৪২৭) পর গুরুর কাছে শেখা নারকেলের মালার পানিপানপাত্র (সাধুমালা) দু’মুঠো অন্নের জন্য বিক্রির উদ্দেশ্যে তৈরি শুরু করি। কারণ এতে পুঁজি কম লাগে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিতোষ বাউল তার নিজের বাড়ির উঠোনে কংক্রিটের তৈরি মাচায় বসে এক মনে কাজ করছেন নারকেলের মালা নিয়ে। ধারালো ছোট করাত, ছুরি, বাটালি, শিরিষ কাগজ নিয়ে নারকেলের মালা মসৃণ করছেন তিনি।
তিনি জানান, রাতের বেলা কাজের নিমগ্নতায় কোনো কোন দিন কখন ভোর হয়ে যায় টেরই পাই না।
দুই সন্তানের জনক পরিতোষ বাউল জানান, অর্থের অভাবে বড় করে এ ব্যবসা করতে পারছি না। স্থানীয় বাজার থেকেই শুকনো ও দোমালা নারকেল কিনে আনি। নারকেলের শাঁস কেটে শুকিয়ে তেল তৈরি করি। এরপর নারকেলের মালার আকার বুঝে এসব সামগ্রী তৈরি করি।
তিনি বলেন, তার হাতে বানানো শতাধিক এ সামগ্রী প্রথম ঢাকার একজন শো-পিস ব্যবসায়ী কিনে নিয়ে যান।
পরিতোষ বাউলের হাতে তৈরি নারকেলের মালার ঘর সাজানোর বিভিন্ন সামগ্রী, ফুলদানি, কলমদানি, বিভিন্ন আকারের শোপিস, মোবাইল ফোন রাখার পাত্র, ছোট-বড় বাটি, গ্লাস ছাড়াও শোপিসসহ গৃহস্থালিসামগ্রী পাবেন ১০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।
এছাড়াও তার কাছে পাওয়া যাবে নারকেলের মালার একতারা ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকায়, লাউয়ের বসের একতারা ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকায়, লাইলনের ছিঁকে ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
পরিতোষ বাউল বলেন, যদি কেউ আগ্রহী হয়ে কিনতে চান বা ফরমায়েশ দিয়ে বানিয়ে নিতে চান, তাহলে যোগাযোগ করতে পারেন। যোগাযোগের নং ০১৯২৭-৪১১৩২৩।
তিনি বলেন, নারিকেলের পরিত্যক্ত অংশ দিয়ে তৈরি এসব পণ্য তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরো ভালোভাবে এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবো।
নারিকেল অর্থকরী ফল ও তেলজাতীয় ফসল। খাদ্য বা পানীয় হিসেবে আমরা নারিকেলের যে শাঁস ব্যবহার করি তা পুরো নারিকেলের ৩৫ শতাংশ মাত্র। বাকি ৬৫ শতাংশ হলো খোসা ও মালা। নারিকেলের মালা দিয়ে বোতাম, অ্যাক্টিভেটেট কাঠ কয়লা, বাটি, খেলনা, কুটিরশিল্প, চামচ ও খোসা থেকে আঁশ এবং আঁশজাত দ্রব্য যেমন দড়ি, মাদুর এসব তৈরি হয়। দড়ি তৈরি করার সময় খোসা থেকে যে তুষ বের হয় তা পচিয়ে উৎকৃষ্ট জৈবসার তৈরি করা যায়।
কৃষি তথ্য সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, যশোর ও বাগেরহাট অঞ্চলে নারিকেল খোসার আঁশ ব্লিচিংয়ের মাধ্যমে সাদা করে বিদেশে রফতানি করা হয়। নারিকেলের ছোবড়ার ঝুরা দিয়ে উৎকৃষ্টমানের বীজ চারা উৎপাদন মিডিয়া হিসেবে নার্সারির বেডে ব্যবহৃত হয়।
বিবার্তা/তুহিন/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]