শিরোনাম
গৌরীপুর ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে জমিদার আমলের পুরনো ভবন
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২০, ২০:৪১
গৌরীপুর ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে জমিদার আমলের পুরনো ভবন
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ময়মনসিংহের গৌরীপুর সরকারি কলেজের নতুন ভবন নির্মাণের অজুহাতে ভাঙা হচ্ছে জমিদার আমলে নির্মিত প্রাচীন কারুকার্যে ভরপুর পুরার্কীতির প্রত্নতত্ত্বের ভবন।


জমিদারের আড্ডা বা দরবারশালা খ্যাত এ ভবনটি ভেঙে ফেলায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী। সচেতন নাগরিকসমাজ ও সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি ‘ভেঙে ধ্বংস নয়, সংস্কার করে পুরার্কীতি সংরক্ষণ’।


কৃষ্ণপুর জমিদারের এ বাড়িতে ১৯৬৪ সালের ১ আগস্ট জন্ম নেয় কলেজটি। ভাগীরথী দেবীর কন্যা কৃষ্ণমণিকে বিয়ে করায় যৌতুক হিসেবে এ তালুক দেয়া হয় গোবিন্দ প্রসাদ লাহিড়ীকে। কৃষ্ণমণির নাম অনুসারে এ এলাকার নামকরণও হয় কৃষ্ণপুর।


কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কৃষ্ণমণির দরবারশালাটিতে চলছিল কমনরুম ও ছাত্র সংসদের কার্যক্রম। যা ভেঙে ফেলা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় বইছে।


এ বিষয়ে গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম মিন্টু জানান, প্রাচীন স্থাপনাটি কলেজের ছাত্র সংসদের কার্যালয় ও পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের কমন রুম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু ভবন নির্মাণের অজুহাতে স্থাপনাটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।


জানা গেছে, ১৯৬৪ সালের ১ আগস্ট গৌরীপুর পৌর শহরের কৃষ্ণপুর এলাকায় জমিদার সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহিড়ীর বাড়িতে গৌরীপুর সরকারি কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ২২ একর জমির উপর গড়ে উঠে দৃষ্টিনন্দন কলেজটি। প্রাচীন নিদর্শন, সুপ্রশস্থ মনোরম ক্যাম্পাস ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠটি ক্রমেই দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়।


১৯৯১ সালে কলেজটি সরকারিকরণ হয়। ২০১২ সালে কলেজে অনার্স কোর্স চালু হয়। এ অবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে গেলে দেখা দেয় ভবন সংকট। সম্প্রতি কলেজে ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্রাচীন স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরু হয়।


বুধবার থেকে স্থাপনা ভাঙার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে। কলেজে বিকল্প জায়গা থাকার পরও কেন প্রাচীন নিদর্শন ভেঙে ভবন নির্মাণ হচ্ছে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কলেজের অধ্যক্ষ ভবনের পাশে প্রাচীন স্থাপনাটি ভাঙার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে একতলা ছাদবিশিষ্ট স্থাপনাটির উপরিভাগ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি অংশ ভাঙা হবে বলে জানান নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা।


গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন জুয়েল বলেন, একাধিক ভবন নির্মাণের জন্য গৌরীপুর সরকারি কলেজের নিজস্ব অনেক জমি খালি পড়ে রয়েছে। আমাদের দাবি ওই সব খালি জমিতে ভবন নির্মাণ করা হোক। পাশাপাশি ঐতিহাসিক নিদর্শনটি না ভেঙে এর অবকাঠামো ঠিক রেখে দৃষ্টিনন্দনভাবে সংস্কার করা হোক। ভবন ভাঙার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান, এসো গৌরীপুর গড়ি সংগঠনের সমন্বয়ক আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি।


গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির জানান, নতুন ভবন নির্মাণের নামে প্রাচীন ভবন ভেঙে ঐতিহ্য নষ্ট করা নিন্দীয় কাজ। সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, অপরিকল্পিত সংস্কার ও নির্মাণ কাজের জন্য কলেজের প্রাচীন নিদর্শনগুলো ধ্বংস হচ্ছে। কয়েক বছর আগে সংস্কারের নামে কলেজের প্রবেশপথে প্রাচীন ভবনের উপরিভাগের একাংশ ভেঙে ফেলা হয়।


গৌরীপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, সরকারি কলেজে বিপুল জমি রয়েছে। ভবন না ভেঙেও নতুন শত ভবন করার মতো স্থান রয়েছে।


পুরাতন ভবনটি ভাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে গৌরীপুর সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি বেগ ফারুক আহম্মেদ জানিয়েছেন আমি ভিপি হিসাবে অনেক কর্মের মধ্যে এই ভবনটি উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। যুগের পরিবর্তনে বর্তমানে সরকার ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো রক্ষার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদেরও অধ্যক্ষের সাথে কথা বলার দরকার আছে। অত্র কলেজের অগনিত বর্তমান সাবেক ছাত্র, সাবেক ভিপি, জিএস, নেতৃবৃন্দ আজকের ঐতিহাসিক ভবন ভাঙ্গার দৃশ্য দেখে অন্তরে রক্তকরন হচ্ছে। তিনি ভবনটি ভাঙ্গার পথ পরিহার করার দাবী রাখেছেন।


এ বিষয়ে গৌরীপুর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মিল্টন ভট্টাচার্য জানান, প্রাচীন স্থাপনাটির অবকাঠামো দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এটি সংস্কার করে সংরক্ষণের সুযোগ নেই। স্থাপনাটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত পড়েছিল। তাই ভবন নির্মাণের জন্য যথাযথ নিয়ম মেনে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এটি ভাঙা হচ্ছে। তবে কলেজের যে সব প্রাচীন নিদর্শন সংস্কার করার সুযোগ রয়েছে সেগুলো সংস্কার করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।


বিবার্তা/হুমায়ুন/এসএ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com