শিরোনাম
‘ভূমিদস্যু’ মজিদের হাত থেকে বাঁচতে চায় শতাধিক মানুষ
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২০, ১৯:৪০
‘ভূমিদস্যু’ মজিদের হাত থেকে বাঁচতে চায় শতাধিক মানুষ
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে জমি দখল, সরকারি সম্পত্তি দখল করে মার্কেট নির্মাণ ও বরাদ্দ প্রদান, মামলা দিয়ে নিরিহ কৃষকদের হয়রানিসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যনসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে একাধিক অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ভুক্তোভোগীরা অশেষে তদন্তসাপেক্ষে প্রতিকার চেয়ে ভূমিমন্ত্রী, দুদক মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরে গণঅভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরেও দেয়া হয়েছে।


অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদ পেশায় একজন ব্যবসায়ী। নিজের অপকর্মকে আড়াল করতে স্ত্রী কহিনুর বেগমের নামে চা বাজারজাতকরণ কোম্পানী, কাপড়ের দোকানসহ রয়েছে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়ী পরিচয়ের আড়লে তিনি মুলত জমি জালিয়াতিসহ নানা অপকর্মে জড়িত। কৌশলে স্থানীয়দের ফাঁসিয়ে বিপদে ফেলেন। তাদের নানাভাবে হয়রানিসহ এক পর্যায়ে তাদের কাছেই অর্থ আদায় করেন।


অভিযোগে বলা হয়, আব্দুল মজিদ স্থানীয় ঈদগাহ, মসজিদ, মাদরাসা এবং সরকারি ক্লিনিকের জন্য অন্যের দানকৃত জমির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানা দাবি করেন। একাধিক কৃষক পরিবারের বসতভিটা নিজের দাবি করে মামলা করেন। নারীঘটিত বিভিন্ন বিষয়ে কৌশলে ঝগড়া সৃষ্টি করে তৃতীয় পক্ষ সেজে আর্থিক ফায়দা হাসিল করেন। সড়কের পাশে সরকারি খাস জমি দখল করে নিজে মালিক সেজে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয়দের বরাদ্দ দেন।


শালবাহান রোড বাজারের মূল্যবান সরকারি জায়গায় অবস্থিত দোকানের পাশের জায়গাও বিক্রি করেন। স্থানীয় প্রভাবশালী ও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এমন অপকর্ম করে চলেছেন। নিরিহ কৃষকদের জমি সংক্রান্ত প্যাঁচে ফেলে সুযোগ বুঝে তিনি তাদের কাছেই মোটা অংকের টাকা আদায় করেন। এসব অপকর্মের ফলে অল্প দিনেই অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যান আব্দুল মজিদ। তবে মামলা এবং অযথা হয়রানির ভয়ে প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে কেউ সাহস পান না।


কান্না জড়িত কন্ঠে মজিদের অপকর্মের বর্ণনা দেন শালবাহান রোড এলাকার শ্রমজীবী নারী আয়েশা খাতুন (৫২)। তিনি জানান, তার ক্রয়কৃত ১০ শতক বসতভিটার উপর মজিদের চোখে পড়ে। এরপর তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করেন। ৪০ বছর আগে স্বামী হারা এই নারী নিজেই আয় করে মজিদের সাথে মামলা পরিচালনা করেছেন। নিম্ন আদালতে রায় পেলেও মুক্ত হতে পারেননি মজিদের কবল থেকে।


মাঝিপাড়ার শালবাহান রোড জামে মসজিদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লা হেল বাকী (৭৫) জানান, এই মসজিদের জমি স্থনীয় এক ব্যক্তি দান করেন। কিন্তু গোপনে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে আব্দুল মজিদ এখন এই মসজিদ ও ঈদগাহের জমিও তার কবলে নিয়েছেন। মসজিদ এবং ঈদগাহের জমি নিজের দাবি করে তিনি আমাদের নামাজে আসতেও বাধা দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে অনেক অভিযোগ করেছি। তিনি কারো কথায় কর্ণপাত করেন না। আমরাও এর কোনো প্রতিকার পাইনা। আমরা তার এমন অনৈতিক কর্মকান্ডের তদন্ত করে বিচার দাবি করছি।


একই ধরণের অভিযোগ করেন ওই এলাকার শামসুল হক, আবুল হোসেন, আহম্মদ আলী ও আব্দুল মান্নানসহ শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা। মজিদের কর্মকান্ড নিয়ে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য গণঅভিযোগ দাখিল করেন তারা।


এ ব্যাপারে আব্দুল মজিদের সাথে কথা বললে জমি বিক্রির কথা শিকার করেন তিনি। তিনি বলেন, প্রথমবার তিনি যে জমিগুলো যার কাছ থেকে ক্রয় করেছেন এবং বিক্রি করেছেন তার দলিল সঠিক ছিলনা। বর্তমানে তার স্ত্রী ওই জমিগুলো কিনেছেন এবং যে দলিলগুলো রয়েছে তা সঠিক বলে দাবি করেন তিনি। এ্যানিমি প্রপাটির সম্পতি বলে যে জমিগুলোর অভিযোগ উঠেছে সেগুলো তার সম্পতি বলেও দাবি করেন তিনি।


এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল মান্নান বলেন, তেঁতুলিয়ার শালবাহান রোড এলাকার আব্দুল মজিদ নামে এক জনের বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনা তদন্তে অভিযোগটি তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতার কাছে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/গোফরান/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com