খলিলুর রহমান। একজন দরিদ্র রিকশা চালক। তিন ছেলেমেয়ে আর স্বামী-স্ত্রীসহ পাঁচ-পাঁচটি পেটের খোরাক যোগাতে হয় তার একারই। থাকেন বরগুনার পোটকাখালী আবাসন প্রকল্পে। লকডাউনের মধ্যেও লুকিয়ে লুকিয়ে দু’একটি ট্রিপ ধরেন খলিল।
ট্রিপ না ধরলে চলবে কী করে? কোলের শিশুসহ তিন-তিনটি ছেলেমেয়ের পেটে তো কিছু দিতেই হবে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে না হয় পেটে পাথর বেঁধে থাকলেন। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে ট্রিপ ধরেন খলিল। সবসময় ভয় প্রশাসনের। কখন লাঠি চালিয়ে দেয় পিঠে।
দুরু দুরু বুকে ভয়ভীতি নিয়ে দ্রুতই রিকশা চালান খলিল। সেদিন বরগুনার নাথপট্টি লেকের মোড়ে সামনে চলতে থাকা একটি মাইক্রোবাস হঠাৎ করেই ব্রেক করে বসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার রিকশাটি গিয়ে লাগে সেই মাইক্রোবাসের পেছনের দিকে। বেশ খানিকটা দাগ পড়ে যায় মাইক্রোবাসে।
ব্যাস! অপরাধ ওইটুকুই। ওই অপরাধে টানা চারদিন দরিদ্র রিকশা চালক খলিলের রিকশাটি আটকে রাখেন সেই মাইক্রোবাসের মালিক, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু। শুধু রিকশাই আটকে রাখলেন না, দরিদ্র সেই রিকশা চালকের কাছ থেকে জরিমানা নিলেন পাঁচশত টাকাও।
রিকশা চালক খলিল বিবার্তাকে বলেন, ‘নেতারা আরো গরীব মানুষের পাশে আইসা দাঁড়ায়। বিশেষ কইরা এই করোনার সময় রিকশাচালক কী খাইবে হেই চিন্তা করবে। হ্যা না কইরা হেই নেতায় আমার রিকশাটা চাইরডা দিন আটকাইয়া রাখলো। কত অনুনয় বিনয় করলাম, দিলোই না। উপরন্তু আমার কাছ থেইকা জোর কইরা পাঁচ'শ টাহাও জরিমানা রাখছে। আমি আমার এক আত্মীয়র কাছ দিয়া ধার কইরা টাকা আইননা দিছি।’
খলিল আরো বলেন, ‘কত মানষের হাতে পায়ে ধরছি, কইছি আমার রিকশাটা একটু ছাড়াইয়া আইনা দেন। অনেকেই হ্যার ধারে গেছে। কিন্তু হ্যাগো কতায় আমারে রিকশা ফেরৎ দেয় নায়। শ্যাষে বরগুনা শহরের এক ডাক্তার আফায় আছে। যে বেশিরভাগ সময় আমার রিকশায় আওয়া যাওয়া করেন। হ্যারে ধইরা চারদিনের মাথায় আমার রিকশাটা আমি ফেরৎ পাইছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, ‘একজন দরিদ্র রিকশাচালকের সাথে একজন রাজনৈতিক নেতার এমন আচরণ কিছুতেই মানায় না। বিশেষ করে যিনি মাঠে ময়দানে সবসময় দরিদ্র মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওই মাইক্রোবাসের মালিক গোলাম সরোয়ার টুকু বিবার্তাকে বলেন, এটা মিথ্যা কথা। আমি তার রিকশা আটক করিনি।
তবে যে মাইক্রোবাসে রিকশার ধাক্কা লাগছে সেই গাড়ি কার জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাড়িটি আমার। তবে আমি ছিলাম না গাড়িতে।
বিবার্তা/খলিল/জাহিদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]