শিরোনাম
যশোরে বিদেশ ফেরত ২২ হাজার, কোয়ারেন্টাইনে তিন শতাধিক
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২০, ১৫:২৫
যশোরে বিদেশ ফেরত ২২ হাজার,  কোয়ারেন্টাইনে তিন শতাধিক
যশোর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

গত এক মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে যশোরে এসেছেন ২২ হাজার প্রবাসী। যাদের মধ্যে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মাত্র ৩৩৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাকিরা কী অবস্থায় আছেন তা নিশ্চিত করতে আট উপজেলায় প্রবাস ফেরতদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জেলার সব ইউপি সদস্যকে প্রধান করে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ।


যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তদের শনাক্ত ও চিকিৎসা দেবেন যারা, সেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাই রয়েছেন সুরক্ষা উপকরণ ছাড়া। এই ভাইরাসে বিপর্যস্ত ইতালিসহ অন্যান্য দেশ থেকে ফেরা শত শত প্রবাসী দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ায় এই রোগাক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার আশঙ্কা তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে জ্বর-সর্দি, কাশি-হাঁচি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে অর্ধ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাছাড়া জ্বর-সর্দি, কাশি-হাঁচি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিনই কয়েকশ রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। রোগীরা হাসপাতালে গাদাগাদি করে ডাক্তার দেখাচ্ছেন। যেখানে-সেখানে হাঁচি-কাশি দিচ্ছেন। একজন আরেকজনকে নির্দ্বিধায় স্পর্শ করছেন। তাদের বেশিরভাগই অসচেতন।


যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, যশোর জেলায় ৩৩৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে নির্দেশ অমান্য করবে তাদের ব্যাপারে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নির্দেশ অমান্যকারীদের জেল-জরিমানা করবে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে ২২ হাজার মানুষ বিদেশ থেকে যশোরে আসলেও হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন মাত্র ৩৩৫ জন। বাকিরা কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন তার কোনো চিত্র প্রশাসনের কাছে নেই। যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলে বলা হচ্ছে, তারাও সঠিকভাবে নিয়ম মানছেন না বলে স্থানীয়রা জানান। সংগত কারণে যশোরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে সরকার সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের তালিকা স্ব স্ব জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছে। ওই তালিকা ধরে এসব ব্যক্তিদের সর্বশেষ অবস্থান ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই তালিকায় যশোরের আট উপজেলায় আছেন ২২ হাজার। যারা গত এক মাসে ভারত, চীন, ইতালি, সৌদিআবর, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন।


তালিকা পাওয়ার পর শুক্রবার যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলায় যান। সেখানে উপজেলা প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের সাথে তিনি কথা বলেছেন। তালিকায় থাকা বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা কোথায় কিভাবে আছেন, হোম কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনা মানছেন কিনা তা দ্রুত খোঁজ নিতে বলেছেন। এই কাজের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির নেতৃত্বে আছেন একজন ইউপি সদস্য। এই কমিটি ওয়ার্ডের বিদেশ ফেরত ব্যক্তির হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করবে। কোনো ব্যক্তি কমিটির নির্দেশনা না মানলে জেলা প্রশাসক তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করবেন।


এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানিয়েছেন, আমাদের কাছে ২২ হাজার ব্যক্তির একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। যাদের পাসপোর্টে যশোরের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে তারা সবাই যশোরে অবস্থান করছেন কিনা তা আমাদের জানা নেই। তালিকাটি সব উপজেলায় পাঠিয়ে দিয়েছি। শুক্রবার শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলায় গিয়েছি। শনিবার বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলায় গেছি। যশোরে অবস্থান করা সব বিদেশফেরত ব্যক্তিকে পর্যাবেক্ষণে আনতে আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রয়োজনে আমরা আইন প্রয়োগ করব।


এদিকে যশোরের চিকিৎসকরা বলছেন, এখন বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে নিশ্চিতে তাদের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালে যেসব রোগী আসছে তাদের মধ্যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে তা সহজেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। চিকিৎসক তো হাসপাতালে ওই একটা রোগী দেখেন না, তার আরো অনেক রোগী দেখতে হয়। এ রকম হলে সবার মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।


তারা আরো জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশে হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট, কোয়ারেন্টাইন সুবিধা নিশ্চিতে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। তবে সঙ্কট দেখা দিয়েছে ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ বা পিপিই নিয়ে। সুরক্ষা উপকরণ না থাকায় আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে।


ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট বা পিপিই) জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ মানুষ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা দেয়। এসব উপকরণের মধ্যে রয়েছে প্রতিরোধমূলক পোশাক, হেলমেট, গ্লাভস, বিশেষ ধরনের চশমা, মুখের মাস্ক এবং অন্যান্য বিশেষভাবে তৈরি উপকরণ, যেগুলো জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবে।


এসব উপকরণ এখনও না পৌঁছানোয় আতঙ্কের মধ্যে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক।


তারা জানান, প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে ঠান্ডা, জ্বর ও কাশির রোগীও আসেন কয়েকশ’। আমরা তাদের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। কিন্তু হাসপাতাল থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় মাস্ক ও গ্লাভস সরবরাহ করা হচ্ছে না। এজন্য আমরা ঝুঁকিতে আছি। ব্যক্তিগত কিছু জিনিস নিয়ে কাজ করছি। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা হয়তো নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সকল চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় মাস্ক ও গ্লাভসসহ অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রি সরবরাহ করা উচিত। তা না হলে দ্রুত করোনাভাইরাস একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।


সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যশোরে সদর হাসপাতালে ১০ শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৫ শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেসন ইউনিট বা পাঁচটি করে শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় মাস্ক ও গ্লাভসসহ অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রি খুব শিগগির সরবরাহ করা হবে। যশোরে প্রবাসীরা অনেকে বাড়ি আসছেন। এতে করে যশোরের ঝুঁকিটা স্বাভাবিকভাবেই রয়েছে। তবে করোনাভাইরাস নিয়ে সর্বাত্মকভাবে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রবাসী যারা বাড়িতে আসছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হচ্ছে। তবে যারা এটা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/তুহিন/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com